ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে দলটির কর্মসূচি যোগ দেবে ২০ দলীয় জোট। আজ রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা। মিথ্য ও বানোয়াট মামলায় তাঁকে সাজা দেওয়ার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তাঁরা।
এ ছাড়া বৈঠকে জোটের পক্ষ থেকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও সারা দেশে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে বলে জানান মির্জা ফখরুল।
বিএনপি নেতা বলেন, বৈঠকে বিএনপির চলমান আন্দোলনের কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ গ্রহণের বিষয়ে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দলীয় জোট। খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক বন্দির মুক্তির দাবিতে আগামী দিনে জোটের পক্ষ থেকে সমন্বিত কর্মসূচি দেওয়া হবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও জোট সম্প্রসারণে সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০ দল। তিনি বলেন, ‘২০ দলীয় জোট, এই স্বৈরাচারি সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছে। আসন্ন নির্বাচনে যেন সব দলের অংশগ্রহণ করতে পারে সেজন্য নিরপেক্ষ ও সহায়ক সরকারের অধীনে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। অবিলম্বে খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তি দাবি করা হয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকুক বা যেখানেই থাকুক তিনিই জোটের নেত্রী। তিনিই ২০ দলের নেত্রী। এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। সমন্বয়ক হিসেবে আমি কাজ করেছিলাম। এখনো করছি।’
এদিকে, ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে লন্ডন থেকে টেলিফোনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যোগ দেন বলে জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম। জনগণের জন্য একটা প্লাটফর্ম তৈরির ওপর বিএনপি জোর দিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া শেষ সংবাদ সম্মেলন করে যে জাতীয় ঐক্য গঠন করার জন্য বলেছেন ২০ দলের নেতারা তার সে বক্তব্য সমর্থন করেছেন।
এর আগে গতকাল শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়াকে ‘ভিত্তিহীন বানোয়াট মামলায়’ সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে এবং অবিলম্বে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
কর্মসূচি শুরু হবে আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে। ওই দিন ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হবে। পরের দিন আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। শেষের দিন আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বুধবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে জেলা, মহানগর, থানা ও উপজেলায় অনশন কর্মসূচি পালিত হবে।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক ডা. মো. আখতারুজ্জামান। রায়ে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং দুই কোটি ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়।
রায় ঘোষণার পর পরই খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সলিমুল হক কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এঁদের মধ্যে তারেক রহমান, কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান পলাতক।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুই কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০১০ সালের ৫ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন দুদকের উপপরিচালক হারুন-আর রশিদ। ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায়।