ভোলা নিউজ২৪ডটনেট।। নিজের সংগ্রহশালা আগলে রেখেছেন ভারতের কৃষ্ণনগরের অমরেশ মিত্র। ৮১ বছর বয়সী অমরেশের সংগ্রহে রয়েছে একশ ২০ রকমের পাখির ডিম আর হারিয়ে যাওয়া প্রায় দু’শ জাতের ধানের নমুনা।
৫০-৬০-এর দশকে খাল, ঝোপ, জঙ্গল ঘুরে এসব সংগ্রহ করেছিলেন অমরেশ। এত দিন সেসব সংগ্রহ সহজে আগলে রাখতে পারলেও বয়সের ভারে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন বর্তমানে।
একে তার অসুস্থ শরীর। তার ওপর সদস্য বলতে রয়েছেন স্ত্রী আরতি। অথচ দর্শকের বিরাম নেই। মাস দুয়েক আগে পরিচিত এক যুবক তার অভিনব সংগ্রহের কিছু নমুনা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করায় আরো বিপদ বেড়েছে।
প্রতিদিনই কেউ না কেউ তার বাড়িতে যাচ্ছেন। ফলে সেই সংগ্রহশালা ঘুরিয়ে দেখাতে হচ্ছে অসুস্থ শরীরে। অমরেশ বলেন, সরকারি কোনো সংগ্রহ শালা থেকে চাইলে এগুলো তুলে দিতে পারি।
কিন্তু এখানেও তৈরি হয়েছে সমস্যা। তার ইচ্ছা পাঁচ কান হতেই সুযোগ সন্ধানী ভুয়া লোকের আসা-যাওয়া শুরু হয়েছে তার বাড়িতে। পাঁচ দশকের সংগ্রহের ‘ধন’-এর কী গতি হবে ভেবে ঘুম ছুটেছে বৃদ্ধ এই শিক্ষকের।
কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির কাছে নিজের বসতবাড়ির একটি ঘরে তার ওই সংগ্রহশালা। অনেকগুলো আলমারিতে সযত্নে ও বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে সাজানো রয়েছে নমুনা। ইদানীং অসুস্থতার কারণে ঘরের মধ্যে শ্রমিক নিয়ে একটু একটু করে এগোন তিনি। কেউ এলে কোনোরকমে আলমারি খুলে নিজেই দেখান রাজহাঁস থেকে টুনটুনি বা জলপিপি পাখির বিচিত্র ডিম।
অমরেশ বলেন, কাকের বাসায় কোকিল ডিম পাড়ে এটা যেমন আমরা অনেকেই জানি, কিন্তু ক’জন জানেন, সুর তোলা পাপিয়া পাখি ছাতারে পাখির বাসায় ডিম পাড়ে। আবার মা পাখিই সব সময় বাচ্চা বড় করে এটা ঠিক নয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার পর পুরুষ জলপিপি পাখির দায়িত্ব পড়ে বাচ্চা বড় করার। ধনেশ পাখির ক্ষেত্রে গাছের কোটরে থাকা বাচ্চাকে অশ্বত্থ, বট ইত্যাদির পাকা ফল খাওয়ানোর দায়িত্ব তার পুরুষ সঙ্গীটির।
ভিটেয় ঘুঘু চরানোর প্রবাদটা চালু হওয়ার পিছনে আসল কারণ সম্পর্কে অমরেশ বলেন, ঘুঘু পাখি একবার যার সঙ্গে যৌন সম্পর্ক তৈরি করে, দু’জনের কোনো একসঙ্গীর মৃত্যু হলে বাকি একজন কিন্তু বাকি জীবনে আর কোনো সঙ্গী খোঁজে না। মানে, তারপর থেকে একদম একা জীবন কাটায়। পুরুষ বাবুই পাখি আবার সঙ্গী বাছাইয়ের আগে বাসা তৈরি শুরু করে। কাজ অর্ধেক হওয়ার পর পুরুষ পাখিটি ঝাঁকে ফিরে কয়েকজন স্ত্রী পাখিকে বাসাটি দেখাতে নিয়ে যায়। বাসাটি কোনো স্ত্রী বাবুইয়ের পছন্দ হলে তখন সেই স্ত্রী বাবুই বাসাটির বাকি অংশ নির্মাণের কাজ শেষ করে। মানে পুরুষ বাবুই পাখি তার বাসার স্থপতি হলেও বাসার পরিবেশটি উপযুক্ত করে নেয় স্ত্রী বাবুই।
কোন পাখির ডিম কেমন, তা নিজে জানতে ও ছাত্রছাত্রীদের জানাতে ঘুরে ঘুরে একশ ২০ রকম পাখির প্রায় চারশ ডিম সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। ধান সংগ্রহেও সেই পরিশ্রম করতে হয়েছে তাকে স্রেফ পরের প্রজন্মকে দেখানোর জন্য। যা এতদিন ধরে সযত্নে বুক আগলে রেখেছেন তিনি। কাকে এগুলোর উত্তরসূরি করা যায়, তা নিয়ে চিন্তিত অমরেশ। ভুয়া লোকজনের আনাগোনায় সেই চিন্তা আরো বেড়েছে।