দীর্ঘ টানা ২০বছর ধরে দখলে রাখার পর আফগানিস্তান থেকে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে চলে যাচ্ছে বিশ্বের বলদর্পী সামরিক শক্তি আমেরিকা এবং তাদের ইউরোপী সহযোগী বাহিনী । চলতি বছরের আগস্টের ৩১ তারিখের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর গত মে মাসের শুরু থেকে আফগান সেনাদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে তালেবান যোদ্ধারা। একই সঙ্গে বেড়েছে দুইপক্ষের মধ্যে লড়াই এবং সহিংসতা। এরই মধ্যে পাকিস্তান এবং ইরান সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত সেনা যোগাযোগ পথ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে তালেবানরা। দেশটির প্রায় ৪শ জেলার অর্ধেক এলাকা এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। তালেবানরা বিশেষ করে আফগানিস্তানের গ্রামীণ এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। তারা এখন গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলো দখলের চেষ্টার সাথে একের পর এক এলাকা দখলে নিয়ে চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলছে রাজধানী কাবুল।
তালেবানদের অগ্রযাত্রায় দুশ্চিন্তায় আফগান সরকার: বিনিয়োগ নিয়ে হতাশায় ভারত
তালেবানের অগ্রযাত্রার মুখে আফগান সরকার আসন্ন বিপদ দেখতে পাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব বড় শহরে সেনা উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে। তালেবান ঠেকাতে মাসব্যাপী রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে। গজনি, তখর, কান্দাহার, হেলমান্দ ও বাগলনসহ দেশের বিভিন্ন প্রদেশে এখনও তীব্র লড়াই চলছে। তবে যুদ্ধের পরিস্থিতি যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তাতে এটা সুনিশ্চিত করে বলা যায় যে আফগানিস্তানে মার্কিন সমর্থিত প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি’র সরকারের পতন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র ।
সন্ত্রস্ত মার্কিন প্রশাসন: উদ্বিগ্ন জাতিসঙ্ঘ: গত সপ্তাহে জাতিসঙ্ঘ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে আফগানিস্তানে তালেবানের চলমান অভিযানকে আটকানো না গেলে এক দশকের বেশি সময়ের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বেশি বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটতে পারে। এদিকে, ইউএস স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকনস্ট্রাকশন (এসআইজিএআর) জন সপকো গত বৃহস্পতিবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের সঙ্গে চুক্তি সই করার পর থেকে আফগানিস্তানে সশস্ত্র সংগঠনটি সরকারী বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা ও বিভিন্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অভিযান জোরদার করেছে। এ অবস্থায় ‘অস্তিত্বসংকটে’ পড়েছে আফগান সরকার।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বুধবার ভারত সফরে এসে ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বলেছেন, আফগানিস্তানে তালেবান যদি জোর করে ক্ষমতা দখল করতে চায় তাহলে তারা কখনোই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাবেনা। তালেবানদের কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার: সাম্প্রতিক মাস গুলোতে তালেবান তাদের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে। এরই অংশ হিসেবে গত সপ্তাহে চীন সফর করেছে তালেবানের ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি। দলের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির সহপ্রতিষ্ঠাতা মোল্লা আবদুল গনি বারাদার।
গত বুধবার (২৮ জুলাই) চীনের উপকূলীয় তিয়ানজিন শহরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-এর সঙ্গে বৈঠক করেন তালেবান প্রতিনিধিরা। বৈঠকে তালেবান প্রতিনিধি দল চীনকে এ বলে আশ্বস্ত করেছে যে তারা কাউকে প্রতিবেশী কোনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে আফগানিস্তানকে ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে দেবে না।
পর্যবেক্ষকগন বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আফগানিস্তানকে তাদের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বি আর আই) প্রকল্পে যুক্ত করার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণা সংস্থার প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডেরেক গ্রসম্যান এ মাসের গোঁড়ার দিকে তার এক বিশ্লেষণে লিখেছেন, ‘চীন নীরবে আফগানিস্তানে তাদের স্বার্থ রক্ষায় তৎপরতা শুরু করেছে।
জীবন আহমেদ সরকার
সাংবাদিক ও কলামিস্ট