ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট : আগামী ১২ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের চার বছর পূর্তি হচ্ছে। এদিন থেকেই জেলা পর্যায়ে নির্বাচনী সফরে বের হওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনী প্রস্তুতির পাশাপাশি এই সফরের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হলো বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার দুর্নীতি মামলার রায় পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলা।
আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, জিয়া পরিবারের দুর্নীতির তথ্য সারা দেশে প্রচার করার জন্য দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা রয়েছে। আর তা করা হবে এসব রাজনৈতিক সফরে। এ ছাড়া আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগ পর্যন্ত নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টে দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচারকাজ শেষ পর্যায়ে। এর একটিতে তারেক রহমানও আসামি। আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, এই দুই মামলায় খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের সাজা হতে পারে। তাই বিএনপির দুই শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ ব্যাপকভাবে প্রচারের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামছে ক্ষমতাসীন দল। এ সময় খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর পাচার করা অর্থ সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনার বিষয়টিও প্রচারে আনা হবে।
এ ছাড়া দুই মেয়াদে গত নয় বছরে শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ এবং ২০১৪-১৫ সালে বিএনপি হরতাল-অবরোধের সময় জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনা প্রচার করা হবে বলে জানা গেছে।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ছয়জন নেতার সঙ্গে দলের আগামী দিনের এই রাজনৈতিক কর্মসূচি ও কৌশলের বিষয়ে কথা হয়। তাঁরা বলেন, দুর্নীতির মামলার রায়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সাজা হলে বিএনপি এটাকে রাজনৈতিক রায় বলে প্রচার চালাতে পারে। এ জন্য রায়ের আগে থেকে আওয়ামী লীগ জেলা সফরে এ বিষয়ে প্রচার শুরু করবে। জেলা সফর শেষ হলে এই সফর উপজেলা পর্যায়েও বিস্তৃত হবে বলে দলীয় নেতারা জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত শনিবার অনুষ্ঠিত দলের সভাপতিমণ্ডলীর এক বৈঠকে জেলায় জেলায় সাংগঠনিক সফরের সিদ্ধান্ত হয়। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে সফরের জন্য সাংগঠনিক দল গঠনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরই মধ্যে ১৫টি দল গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি দলের নেতৃত্বে থাকবেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বা জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এ সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান প্রথম আলোকে বলেন, প্রথমে জেলা, পরে উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সফর চলবে। মূল লক্ষ্য হচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার এ পর্যন্ত কী করেছে, ভবিষ্যতে ক্ষমতায় এলে কী কী করবে—মানুষকে এর একটা ধারণা দেওয়া। যাতে তাঁরা কাকে ভোট দেবেন, কেন ভোট দেবেন—এ বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি, সন্ত্রাস এবং বর্তমানে সারা বিশ্বে বাংলাদেশের কী মর্যাদা সেটা তুলে ধরা হবে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দেশি-বিদেশি নানা সংস্থা দিয়ে জরিপ চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থাও নিয়মিত প্রতিবেদন দিচ্ছে। এসব জরিপ-প্রতিবেদনে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-কোন্দলের বিষয়টি আসছে। এই সাংগঠনিক সফরে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের চেষ্টাও থাকবে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি প্রণয়নে ভূমিকা রয়েছে এমন একাধিক নেতা বলেন, সাংগঠনিক সফরের বাইরে নির্বাচনের বছরের পুরোটাতেই কোনো না কোনো কর্মসূচির মাধ্যমে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ। এসব কর্মসূচি হবে দিবসভিত্তিক। যেমন জানুয়ারিতে সরকারের বর্ষপূর্তিকেন্দ্রিক বিভিন্ন কর্মসূচি থাকবে। এরপর ফেব্রুয়ারি ভাষার মাসেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে এক মাসের কর্মসূচি নেওয়া হবে। অনুরূপভাবে মার্চে স্বাধীনতার মাসের কর্মসূচি থাকবে। এপ্রিল-মে মাসে বড় কোনো উপলক্ষ নেই। তবে রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও সাংগঠনিক কর্মসূচি দিয়ে চালিয়ে দেওয়া যাবে। জুনে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে কর্মসূচি থাকবে। জুলাইয়ে আবার রাজনৈতিক কর্মসূচি। আগস্ট পুরোটাই শোকের মাসের কর্মসূচি। এরপরই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোল শুরু হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচনের বছর শুরু হয়ে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে সময় চলে যাবে। তাই আওয়ামী লীগের এ জন্য নির্বাচনী সফর শুরু হচ্ছে।