আদিল হোসেন তপু, ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট :নাম তার ফারজানা। এবছর সপ্তম শ্রেনী থেকে অষ্টম শ্রেনীতে উঠছে। বয়স ১৩ পেরিয়ে ১৪ ছুই ছুই। এর মধ্যে স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছে রাজমিস্ত্রী বাবার মেয়ে ফারজানা। যেই মেয়েকে তার মা জোড় করে এক ঈমাম এর সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলো। সেই নিজের বাল্য বিয়ে নিজে ঠেকিয়ে দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলো দোমে যাওয়ার পাত্র নয় ফারজানা।
যার কিনা স্বপ্ন হচ্ছে বড় হয়ে একজন ম্যাজিষ্ট্রেট হওয়ার।
তাই সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে পড়াশোনার পাশাপাশি সেলাই এর কাজ করে স্বপ্ন পূরনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে ইউনিসেফ এর সহযোগীতায় ও কোস্ট ট্রাষ্ট এর ব্যবস্থাপনায় ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’ নিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে সেলাই মেশিন ও হাসঁ-মুরগী কিনে আয় করা অর্থ দিয়ে পড়াশোনারা খরচ চালিয়ে যাচ্ছে।
ফারজানার বাসা ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের ৪ নংওয়ার্ডের কানাইনগর গ্রামে। তার বাবা মো: সিরাজ একজন রাজমিস্ত্রী।
ফরজানা জানায়, পরিবারের ৪ বোনের মধ্যে আমিই বড়। ২০১৭ সালের দিকে আমার মা দারিদ্রতা আর পরিবারের অর্থ কষ্টের কারনে ভোলা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণীতে পড়াশোনা অবস্থায় বিয়ে দিতে চায়। তখন আমি নিজেই তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তা ভেঙ্গে দেই। ফারজানা বলেন, আমার স্বপ্ন লেখাপড়া শিখে মানুষের মত মানুষ হবো। কিন্তু বাবা-মা জোরকরে বিয়ে ঠিক করে দেয়, কিন্তু বিয়ে নয়, পড়ালেখা করতে চাই। তাই স্বপ্ন পূরন করতেই বিয়ে বন্ধ করার উদ্যোগ নেই। আরা আমার পাশে এসে দাড়িছেলো কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্য,বাল্য বিয়ে ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সদস্য,সাংবাদিক ও শিক্ষকরা ।
ফরজানা আরো বলেন, বর্তমানে আমি ভোলা সরকারি বালিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেনীতে পড়াশোনা করছি। এবছর জিএসসি পরীক্ষা দিতে দিবো। বড় হয়ে পড়াশোনা করে ম্যাজিষ্ট্রেট হয়ে দেখিয়ে দিতে চাই। কারন দক্ষতা থাকলে মানুষ সবই পারে এটা আমি প্রমান করবো।
কিন্তুু দারিদ্য্রতার যেন আমার বড় বাধাঁ হয়ে দাড়িয়েছিলো। সেই অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনছেন জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও কোস্ট ট্রাস্ট। তারা আমাকে ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’ দিয়ে সহায়তা করে। তাদের অর্থিক সহয়তায় বর্তমানে আমি একটি সেলাই মেশিন কিনেছে।
সেই মেশিনে স্থানীয় বিভিন্ন মানুষের জামা কাপড় সেলাই করে অর্থ আয় করছি। বর্তমানে আমি মাসে ১৫০০- থেকে ২০০০ হাজার টাকা মাসে আয় করছি। সেই অর্থ দিয়ে আমি আমার লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে যাচ্ছে। এখন শুধু আমার নয় আমার ছোট বোনদের পড়াশোনার খরচও চালাতে সহায়তা করছে। ফরজানা এখন শুধু সেলাই করেই নয় এর পাশাপাশি হাসঁ-মুরগী পালন করে পরিবারে আমিষের চাহিদা পূরন করছে।
ফরাজানা বলনে, আমি চাই কোন কিশোরীর যেন আঠারো বছর আগে বিয়ে না হয়। কেন বাল্য বিয়ে দেশ ও সমাজের জন্য ক্ষতিকর। একটা পরিবারকে ধ্বংশ করে দেয়। তাই আমি চাই আমরা কিশোরীরা সবাই মিলে ঐক্য গড়ে বাল্য বিয়ে মুক্ত সমাজ গরবো।
ফরজানার মা জান্নাতুল ফেরদৌসও পিতা সিরাজ মিস্ত্রী বলেন, আমরা আসলে বাল্য বিয়ের যে কুফল তা জানতাম না। এর রকম বাধ্য হয়ে আমাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এখন আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। আমরা ফরজানাকে পড়ালেখা করিয়ে তার স্বপ্ন পূরণে সহযোগীতা করে যাবো।
আইইসিএম প্রকল্পের ইউনিয়ন স্মনয়কারী আনঞ্জুমানারা বেগম জানায়, আমরা ফরজানার পাশে দাড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এখন ফরজানার পড়াশোনার খরচ সে নিজেই চালাচ্ছে। পাশাপাশি ক্লাবের সদস্যদের কাছে তিনি রোল মডেল হয়ে উঠেছে।
কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: মিজানুর রহমান জানায়, ভোলা, লালমোহন, চরফ্যাশনের প্রান্তিক ও অবহেলিত, বিদ্যালয় হতে ঝড়ে পড়া, এতিম, অশ্রিত, বিশেষ গুন সম্পন্ন প্রতিবন্ধী এবং শিশু বিবাহের ঝুঁকিতে থাকা এমন ৪০৮জন কিশোরীর মাঝে এক কালীন ১৫ হাজার টাকা ‘শিশু সুরক্ষা বৃত্তি’ প্রদান করা হয়।
এই টাকা পেয়ে স্ব-স্ব কিশোরী এখন স্বাবলম্বী। তারা তাদের নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের খরচও চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেকাংশেই শিশু বিবাহ কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্বচ্ছলতাও হয়েছে অনেকের পরিবারের। এবং ভবিষ্যৎ আমরা আরো বৃত্তি দেয়ার চেষ্টা করবো। এর ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়া সংখ্যাও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান।