ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার দৌলতাবাদে বাস দুর্ঘটনায় আজ সোমবার সন্ধ্যে পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ালো ৩৬ জনে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
স্থানীয় ভৈরব নদীর গোবরা খালের ভেতর পানিতে ডুবে থাকা দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে ওপরে তুলে আনার পর থেকেই বাড়ছে মৃতের সংখ্যা।
অধিকাংশ যাত্রীদের ঘুমন্ত অবস্থাতেই সলিল সমাধি ঘটেছে। এদিন দুর্ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে গেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সামনে দাঁড়িয়ে থেকে উদ্ধার কাজ তদারকি করেছেন তিনি। চারটি ক্রেনে ভৈরব নদীর খাল থেকে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বাসটিকে টেনে তোলার পর থেকেই শুরু হয়েছে লাশ উদ্ধারের কাজ।
এনডিআরএফ ও সরকারি কর্মীরা দুর্ঘটনাগ্রস্ত এনবিএসটিসির বাসের পেছনের এমারজেন্সি দরজা ভেঙে মৃতদেহ বের করছেন। দৌলতাবাদের বালিরঘাটের কাছে নলিনী বাস্কে সেতুর ওপর সার্চ লাইট জ্বেলে চলছে উদ্ধারকাজ।
ভোরে দুর্ঘটনার আট ঘন্টা পর খালের পাক থেকে টেনে বের করা হলো বাসটিকে। বাসের ভেতর থরে থরে আটকে রয়েছে নিথর দেহ। ভৈরবের খালের পাড় জুড়ে শুধু কান্না, হাহাকার, আর্তনাদ আর শেষ আর্তি। একটিবার নিজেদের আপনজনের নিথর দেহকে ছুঁয়ে দেখার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন স্বজনরা। মৃতদেহ একের পর এক উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই পর্যন্ত হাসপাতালে ১৪ জনের দেহ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে বলে জানা গেছে। মৃতের আত্মীয়রা পাগলের মতো হাসপাতালে মৃতদেহের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মৃতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারী ও শিশু রয়েছে বলেও জানা গেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাসপাতালে মৃতের আত্মীয়স্বজন ছাড়া বাকিদের ঢুকতে বারবার বারণ করেছেন। যাতে আত্মীয়রা তাদের পরিজনদের দেহ সহজে শনাক্ত করতে পারেন সেইজন্য নিজে দাঁড়িয়ে থেকে হাসপাতালে তদারকি করছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ভোরে মুর্শিদাবাদের করিমপুর থেকে মালদাগামী একটি যাত্রীবোঝাই বাস দৌলতাবাদের বালিরঘাটের কাছে নলিনী বাস্কে সেতুর রেলিং ভেঙে গোবরা খালে তলিয়ে যায়। দুর্ঘটনার পর উদ্ধার কাজ শুরু করতে পুলিশ প্রশাসন দেরি করায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে গোটা এলাকা। ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের দুটি গাড়ি ও দমকলের গাড়িতে ভাঙ্গচুর চালায়। ভাঙচুর চালানো হয় উদ্ধারকারী ভ্যানটিও। পুলিশকে লক্ষ্য করে চলে ইটবৃষ্টি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিচার্জও করে পুলিশ।
অন্যদিকে, এই দুর্ঘটনার খবর জানার পরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীসহ পরিবহন দপ্তরের কর্মকর্তাদের ঘটনাস্থলে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
পশ্চিমবঙ্গের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী জানান, কুয়াশার মধ্যে সেতুর ওপর একটি ট্রাককে ওভারটেক করতে গিয়েই দুর্ঘটনাটি ঘটে। যদিও দুর্ঘটনা থেকে প্রাণ বেঁচে যাওয়া যাত্রীদের অভিযোগ, বাসটি অতি দ্রুতগতিতে চালানোর পাশাপাশি চালক মোবাইল ফোনে কথা বলছিলেন। এক হাতে বাস চালাচ্ছিলেন। সেতুর ওপর বাসটি উঠতেই চালক ফোনে অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়ায় বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন।
এদিকে, মুর্শিদাবাদের এই দুর্ঘটনায় মৃতদের পরিবারপ্রকি ৫ লাখ রুপি করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। পাশাপাশি গুরুতর আহতদের এক লাখ রুপি এবং অল্প আহতদের ৫০ হাজার রুপি ক্ষতিপূরণ দেবে রাজ্য সরকার।