ফুটপাতে হকার বসানোকে কেন্দ্র করে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় সিটি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ওপর সাংসদ শামীম ওসমানের কর্মী-সমর্থকেরা হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ১০ জন আহত হয়েছেন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ‘হকার মুক্ত ফুটপাত চাই’ স্লোগান ধরে লোকজন নিয়ে চাষাঢ়ার দিকে হেঁটে আসছিলেন সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় সায়েম প্লাজা থেকে আইভীর লোকজনের ওপর বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। পিস্তল উঁচিয়ে ফাঁকা গুলিও ছোড়া হয়। এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে সড়কে পড়ে যান সেলিনা হায়াৎ আইভী। তাঁর পায়ে ইটের আঘাত লেগেছে। সেখান থেকে তিনি সায়েম প্লাজার পাশে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে গিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, সাংসদ শামীম ওসমানের নির্দেশে এ হামলা চালানো হয়েছে।ইট-পাটকেল ছোড়ার কারণে সেলিনা হায়াৎ আইভীর লোকজন সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি।
ঘটনাস্থল চাষাঢ়ায় পুলিশ থাকলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকেরা পুলিশের কাছে জানতে চান, তারা কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। পুলিশ জানায়, অর্ডার নেই। তবে পাঁচটার দিকে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। সাড়ে পাঁচটার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আসে।ইটপাটকেল ছোড়ার পর সেলিনা হায়াৎ আইভী ও শামীম ওসমানের লোকজনের মধ্য সংঘর্ষ হয়। চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি।
প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আইভী বলেন, ‘আমি মৃত্যুকে ভয় করি না। আমি শান্তিপূর্ণভাবে হেঁটে আসছিলাম। চাষাঢ়ার রাইফেলস ক্লাবে বসে শামীম ওসমান আমার ওপর হামলা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। নির্দেশ পেয়ে তাঁর লোকজন ইটপাটকেল ছোড়ে। এটা নিরস্ত্র লোকের ওপর সশস্ত্র হামলা। এ হামলায় সাংবাদিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন।’
ইটপাটকেল ও গুলি ছোড়ার কারণে সেলিনা হায়াৎ আইভীর লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
সিটি করপোরেশনে একমাত্র নারী মেয়র আইভী অবিলম্বে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পদত্যাগ দাবি করেন।
পুলিশের নীরব ভূমিকার ব্যাপারে জানতে চাইলে জেলা পুলিশ সুপার মইনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থলের মাঝখানে থেকে উভয় পক্ষকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছি। জানমালের নিরাপত্তা দিতে চেষ্টা করেছি।’
আইভী অভিযোগ করেছেন, ‘শামীম ওসমানের প্রতি আপনারা সহানুভূতিশীল ছিলেন’, এর জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল জানমালের নিরাপত্তা রক্ষা করা।’
আইভীর অভিযোগের ব্যাপারে ক্ষমতাসীন দলের সাংসদ শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি সেখানে প্রথমে ছিলামই না। আমার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব আমাকে বিকেলে ফোন করে বলেন, সেখানে যা হচ্ছে তা বন্ধ করতে। পরে আমি সেখানে যাই এবং উত্তেজিত লোকজনকে সরিয়ে আনতে সক্ষম হই। আইভী কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে রাস্তায় নামলেন। তাঁর সঙ্গে ছিল যুবদলের খুনের আসামিরা। পরে তারা হকারদের মারধর করেছে। পরে হকাররা উত্তেজিত হলে সংঘর্ষ হয়। আইভীর লোকজনও গুলি চালিয়েছে। ককটেল ফাটিয়েছে। ১০ জন হকার আহত হয়েছেন।’ নিয়াজুল নামে এক ব্যবসায়ীর লাইসেন্স করা পিস্তল কেড়ে নিয়ে তাঁকে মারধর করে টাকাপয়সা কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
সংঘর্ষের পর চাষাঢ়া এলাকায় আসেন শামীম ওসমান। চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ, ১৬ জানুয়ারি। শামীম ওসমান বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় ছিল না। সম্পূর্ণ মানবিক ব্যাপার। আমি একটা দল করি। সেই দলের আদর্শ বহন করাই আমার দায়িত্ব। আমার নেত্রী জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা পৃথিবীতে মাদার অব হিউম্যানিটি উপাধি পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমরা খেলে ১০ লাখ রোহিঙ্গাও খাবে। একনেকে সিদ্ধান্ত, উচ্ছেদের আগে পুনর্বাসন। এটা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ। আমার আবেদন ছিল ২৫ দিন ধরে নিরীহ হকাররা রাস্তায় ঘুরছেন। তাঁদের কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করে যেন ফুটপাত মুক্ত করা হয়।