এম শরীফ আহমেদ/ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট!! শিখা মিত্র আবদুল জব্বার কলেজের সমাজকর্মের অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী। ছোট বোন রথী পিএসসি সমাপনী পরীক্ষা শেষ করেছে। মা আর দুই বোনের সংসার।
বাবা নিতাই মিত্র প্রয়াত হয়েছেন বছর দশেক হলো। ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ বাজারে রানীগঞ্জ রোডে বসবাস পরিবারটির বসত-ভীটে ব্যতীত চাষাবাদের কোন জমি নেই তাদের।
স্বামীর রেখে যাওয়া ৩০ শতাংশ বন্ধকী জমিতে চাষাবাদ করে সারা বছর চলতে হয়। তাতেও আপত্তি ছিল না পরিবারটির। চিন্তা শুধু মেয়ে শিখাকে নিয়ে। জন্মের পর টিকা দিতে গিয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন শিখা মিত্র। নিস্পাপ সুস্থ সবল শিশুটি হারিয়ে ফেলেন স্বাভাবিক চলার ক্ষমতা। নিজেদের নয় ডাক্তারদের ভুলে তাকে পঙ্গু হতে হলো।
দরিদ্র পরিবার হওয়ায় আইনি ঝামেলায় বা ক্ষতিপুরন ও দাবী করা হয়নি, নিয়তিকেই মেনে নিয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অধীনে পঙ্গু ভাতা শিখার শিক্ষার পথ কিছুটা হলেও প্রশস্ত করেছে। দারিদ্রতা মোকাবেলায় মা ঝুমা রানী ২০১৩ সলে এলজিইডি রাস্তা মেরামতের আরইআরএমপি-২ প্রকল্পে দুই বছরের জন্য কাজ নেন। দৈনিক ১৫০ টাকা হাজিরা ভিত্তিতে মাসিক ৪ হাজার ৫শত টাকা বেতন। প্রতিমাসে ৩ হাজার টাকা বেতন পেতেন। ১হাজার ৫শত টাকা একাউন্টে জমা থাকত যা দুই বৎসর শেষে এককালীণ ৩৬ হাজার টাকা পেয়েছেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থায়নে ও পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের সহযোগীতায় কোস্ট ট্রাস্ট ২০১৪ সাল থেকে এলজিইডির রাস্তা মেরামতের কাজে নিয়োজিত আরইআরএমপি-২ নারী কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়ন এবং পুষ্টি ও সাস্থ্য প্রজনন বিষয়ক সেবা প্রদান করে আসছে।
রবি ও খরিপ মৌসুমে বিনা মূল্যে সব্জি বীজ বিতরন, গবাদি পশু-পাখির টিকা ও কৃমিনাশক সেবন এবং গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন ও সব্জি চাষে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করছেন। তারই ধারবাহিকতায় ২০১৫ সালে ঝুমা রাণীর এককালীন পাওয়া টাকার ১৮ হাজার দিয়ে একটি গাভী ক্রয় করে।
নিবিড় পরিচার্যা ও কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে ২০১৬ সালে একটি বাছুর দেয়। বৎসর শেষে বাছুরটি ২৭ হাজার টাকা বিক্রি করে শিখার জন্য কানের দুল এবং ঘরের টিন মেরামত করেন। বর্তমানে মা গাভিটি আবারও গর্ভবতী। নিজেকে নিয়ে ঝুমা রানীর ভাবনা নেই। মেয়ে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তার পঙ্গুত্বের অভিশাপ কিছুটা হলেও মোচন করবে এই প্রত্যাশা।