ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ দিকে খানিক লড়াই করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু আজ দ্বিতীয় ম্যাচে ন্যুনতম প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেনি সাকিব আল হাসানের দল। একপ্রকার হেসেখেলেই বাংলাদেশকে হারিয়েছে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড।
ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে আগে ব্যাট করে ৮ উইকেটে মাত্র ১৩৭ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। জবাবে মাত্র ২ উইকেট হারিয়ে ১৭.৫ ওভারেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে নিউজিল্যান্ড। টানা দুই পরাজয়ে ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা অনেকটাই ফিকে হয়ে গেলো বাংলাদেশের।
মাঝারি লক্ষ্যে খেলতে নেমে তাসকিন আহমেদের প্রথম ওভারে এক বাউন্ডারিসহ ১০ রান তুলে নেয় কিউইরা। পরের দুই ওভারে শরিফুল ইসলাম ও হাসান মাহমুদ দারুণ বোলিং করেন। এ দুজনের দুই ওভার থেকে খরচ হয় মাত্র ৫ রান।
শরিফুলের করা চতুর্থ ওভারে ছক্কা হাঁকিয়ে হাত খোলার ইঙ্গিত দেন অ্যালেন। লেগস্ট্যাম্পের ওপর করা হাফভলি ডেলিভারি অনায়াসেই ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে সীমানার ওপারে পাঠিয়ে দেন এ ডানহাতি ওপেনার। ঘুরে দাঁড়াতে একদমই সময় নেননি শরিফুল।
এক বল পরই অ্যালেনকে সাজঘরের ঠিকানায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছেন এ বাঁহাতি পেসার। তার লেগস্ট্যাম্পের ওপরে করা ডেলিভারি আবার ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে সীমানার কাছে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের হাতে ধরা পড়ে যান ১৮ বলে ১৬ রান করা অ্যালেন।
কিন্তু পরের ওভারে জোড়া বাউন্ডারি হজম করে ১২ রান দিয়ে বসেন হাসান। পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে তাসকিন অবশ্য ভালো বোলিং করে। তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় ও ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে ডেভন কনওয়ে ও কেইন উইলিয়ামসন মিলে নিতে পেরেছেন মাত্র ৪ রান। ফলে পাওয়ার প্লে’তে ৪০ রানের বেশি হয়নি।
তাতে অবশ্য একদমই চিন্তা করেননি নিউজিল্যান্ডের দুই তারকা ব্যাটার কনওয়ে ও উইলিয়ামসন। বরং ছোট লক্ষ্য হওয়ায় দুজন মিলে রয়ে-সয়ে খেলার দিকেই মন দেন। যে কারণে পরের ছয় ওভারে কোনো উইকেট না হারালেও ৪০ রানের বেশি করতে পারেনি তারা।
তবে এর মাঝেই সাকিব আল হাসানের বলে ১০৭ মিটারের বিশাল এক ছক্কা হাঁকিয়ে আগ্রাসনের ইঙ্গিত দেন কনওয়ে। কিন্তু অন্যপ্রান্তে কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন রীতিমতো খোলসবন্দী হয়ে পড়েন। তাই উইকেট না হারালেও রানের গতি তেমন বাড়েনি।
শেষমেশ ইনিংসের ১৫তম ওভারে গিয়ে থামে উইলিয়ামসনের সংগ্রামী ইনিংস। হাসানের করা সেই ওভারের শেষ বলে ত্রিশ গজের বৃত্ত পার করার চেষ্টায় মিড অনে তাসকিনের হাতে ধরা পড়েন ২৯ বলে ৩০ রান করা কিউই অধিনায়ক।
উইলিয়ামসনের বিদায়ে ভাঙে ১১ ওভারে ৭৫ রানের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। অধিনায়ককে হারানোর আগেই ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন কনওয়ে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের পঞ্চম ফিফটি করতে ৩৬ বল খেলেন এ বাঁহাতি ওপেনার।
পরে গ্লেন ফিলিপসকে নিয়ে আর কোনো বিপদ ঘটতে না দিয়ে সহজেই ম্যাচ শেষ করেন কনওয়ে। দুইটি করে চার-ছয়ের মারে ৯ বলে ২৩ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ফিলিপস। কনওয়ের ব্যাট থেকে আসে ৫১ বলে ৭০ রানের ঝকঝকে ইনিংস।
এর আগে টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক। সর্বোচ্চ ৩৩ রান করলেন সাব্বির রহমানের পরিবর্তে ওপেন করতে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত। ২৯ বল খেলে মাত্র ৪টি বাউন্ডারির মার মারতে পেরেছেন তিনি।
২৬ বলে ২৪ রান করে আউট হন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ১৬ বলে ১৬ রান করেন সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশের ব্যাটাররা ছক্কা মারা তো দুরে থাক, বলকে যেন ৩০ গজ বাউন্ডারিই পার করতে পারেন না। এমনকি একটি বলকে বাউন্ডারি মারতেও রাজ্যের কষ্ট তাদের।
একাদশ গঠনের সময়ই সঙ্গী সাব্বির রহমানকে হারালেন মেহেদী হাসান মিরাজ। সাব্বিরকে বাদ দিয়েই একাদশ গঠন করা হয়। মেকশিফট ওপেনার হিসেবে নিজের কার্যকরিতা দিন দিন হারাচ্ছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেটা আরও প্রকটভাবে দেখা গেলো।
ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে টিম সাউদিকে দারুণ একটি বাউন্ডারি মারলেন। পরের বলটি ডট। এরপরের বলেই বলকে তুলে দিলেন আকাশে। মিডঅনে অ্যাডাম মিলনের হাতে সজহেই তালুবন্দী হয়ে যান তিনি। যার ফলে ৫ বলে মাত্র ৫ রান করেই, দলীয় ১২ রানের মাথায় আউট হয়ে যান মিরাজ।
মিরাজের সঙ্গে আজ ছিলেন নিয়মিত ওপেনার। সাব্বিরের পরিবর্তে দলে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত। মিরাজ আউট হয়ে যাওয়ার পর লিটন দাসের সঙ্গে জুটি বাধলেন তিনি।
মেহেদী হাসান মিরাজকে হারানোর পর দ্রুত উইকেট পতন ঠেকানো প্রয়োজন ছিল। সে কাজটা মোটামুটি ভালোই করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত এবং লিটন দাস। গড়ে তুললেন ৪১ রানের জুটি। তবে জুটিটাকে আরেকটু সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল; কিন্তু পারেননি লিটন।
মিচেল বেস্রওয়েলের হাতে রিটার্ন ক্যাচ তুলে দিলেন তিনি। ১৬ বলে ১৫ রান করে সম্ভাবনাময় একটি ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটিয়ে বিদায় নিলেন লিটন।
৯ম ওভারের শেষ বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ তুলে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ইশা সোধি ছিলেন বোলার। লং অনের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকাতে চেয়েছিলেন শান্ত। কিন্তু বল গিয়ে জমা পড়ে সোজা মার্ক চাপম্যানের হাতে। ২৯ বলে ৩৩ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। বাউন্ডারি মারলেন ৪টি। কোনো ছক্কা নেই।
মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এবারের ত্রিদেশীয় সিরিজে পুরোপুরি ফ্লপ। মাত্র ৪ বল খেলে ২ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। ইয়াসির আলী রাব্বি আগের ম্যাচে শেষ দিকে দারুণ মারকুটে ইনিংস খেলেছেন। কিন্তু আজ খেললেন পুরো ব্যর্থ একটি ইনিংস। ৯ বল খেলে ৭ রান করে আউট হলেন তিনি।
তিন থেকে নেমে সাত নম্বরে ব্যাট করতে আসলেন সাকিব আল হাসান। শেষ মুহূর্তে যদি মেরে-কুটে কিছু রান যোগ করা যায়। কিন্তু রান তো আর আসে না। ১৬ বলে ১৬ রান করে তিনি বিদায় নিলেন সাউদির বলে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ২ বলে ৩ রান করে আউট হয়ে যান তাসকিন আহমেদ।
শেষ মুহূর্তে নুরুল হাসান সোহান একটু জ্বলে ওঠার চেষ্টা করলেন। তার এই ছোট্ট ইনিংসেই স্কোরটা একটু চ্যালেঞ্জিং হলো। তিনি করেন ১২ বলে ২৫ রান।