সরকার সবকিছু খুলে দিয়ে কানে তুলা দিয়েছে : মির্জা ফখরুল

0
151

স্টাফ রিপোর্টার ।। করোনাভাইরাসের মহামারির ভয়াবহতা ‘বিবেচনায় না এনে সবকিছু খুলে দিয়ে সরকার কানে তুলে দিয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মির্জা ফখরুল এই মন্তব্য করেন।

সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কাল থেকে দেখছি, রেলগাড়ি চলছে এবং গাদাগাদি করে মানুষ আসছে। বাসে রীতিমতো মারামারি হচ্ছে উঠার জন্য, জায়গা পাওয়ার জন্য। এভাবে গণপরিবহনকে নিয়ন্ত্রণ করবেন? যেখানে আপনি অফিস খুলে দিয়েছেন, অফিস খুললে তো লোকজন আসবেই। লঞ্চেও একই অবস্থা হয়েছে। (সুত্র এনটিভি অনলাইন)

`বারবার করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তাদের (সরকার) নিয়োজিত যে টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটি রয়েছে তারাও বলছে যে, এটা (সব কিছু খুলে দেওয়া) একটা সুইসাইডাল। এটা করলে একটা ভয়ংকর অবস্থা তৈরি হবে। তারা সেই কথা শুনেননি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর যে ব্যক্তিগত চিকিৎসক যিনি আছেন অধ্যাপক এম আবদুল্লাহ সাহেব, তাঁকে অ্যাডভাইজার হিসেবে নেওয়া হয়েছে তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন যে, এটা ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করবে। সংক্রামণ আরো ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাবে। এটা পরিষ্কার যে, তারা (সরকার) ব্যর্থ হয়েছে এই করোনাভাইরাসের উদ্ভূত যে পরিস্থিতি সেটাকে সামাল দিতে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা আরো সময় নিতে পারত। ভারতে দেখেন, তারা সব রাজ্যের চিফ মিনিস্টার, প্রিন্সিপাল সেক্রেটারিদের সঙ্গে কথা বলেছে, কথা বলে আরো এক মাস লকডাউন বাড়িয়েছে। যে কথাটা আমি বারবার বলেছি, দায়িত্বশীলতা নেই বলেই সরকার এভাবে তুঘলকি কারবার করছে। জনগণকে পুরোপুরিভাবে মহাবিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের একলা চলো নীতি, সেই একলা চলো নীতি পুরোপুরিভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ৭৭ হাজার কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ দেওয়া হবে, কোনো ইনসেনটিভ না। এটা কিন্তু একটা কৌশল। যে কৌশল আপনি দেখছেন খুনাখুনিও হচ্ছে। এক ব্যাংকের ডিরেক্টর আরেক ব্যাংকের ডিরেক্টরকে ধরে নিয়ে আসছে বাসায়, তাঁকে বন্দুক ধরছে। তাঁরা আবার এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশ থেকে চলেও যাচ্ছে। হোয়ার ইজ গর্ভমেন্ট, সরকার কোথায়? আজকে এই কারণে এতো ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাচ্ছে সেজন্যই।

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমরা কিছু বললেই তো বলে যে, আমরা উসকানি দেওয়ার চেষ্টা করছি, আমরা সমালোচনা করছি। একজন তো প্রায়ই বলেন যে, বিষোদগার করবেন না। আরে বিষোদগার করে আপনারা যে অবৈধভাবে সরকার দখল করে আছেন সেটা বলছি না। আমরা বলছি যে, আপনারা ব্যর্থ হয়েছেন। এটা পারছেন না করতে, এই জিনিসটা করা উচিত ছিল। এই জিনিসগুলোই আমরা বারবার করে বলছি। কিন্তু ওই যে, কানে দিয়েছি তুলো। যা খুশি বলেন আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা তো আছি। আমি বলি, থাকে না। জনগণের চাহিদা যদি পূরণ করা না যায়, জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা যদি পূরণ না করা যায়, আর যদি ভয়াবহ দুর্যোগ নেমে আসে, তাহলে কিন্তু থাকে না, চিরকাল থাকে না।

বাসভাড়া ৬০ ভাগ বাড়ানোর সমালোচনা করে বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘বাসভাড়া বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত অমানবিক। এটা সম্পূর্ণভাবে একটা অমানবিক কাজ করা হয়েছে। আর এমনিতেই মানুষের ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। বাসে কারা উঠে? কম আয়ের সাধারণ মানুষেরাই বাসে উঠে। তাদের বাসভাড়া বাড়িয়ে দিল। কার স্বার্থে বাড়িয়েছে? মালিকদের স্বার্থে বাড়িয়েছে। মালিকদের আবার প্রণোদনা দিচ্ছে, অনুদান দিচ্ছে। পুরো বিষয়টা হয়েছে লুটপাটের জন্য, পুরোপুরি লুটপাট। শুধু দুর্নীতির চরমভাবে সুযোগ নিচ্ছে সবাই।

গণস্বাস্থ্যের উদ্ভাবিত কিট অনুমোদন না পাওয়ার বিষয়টি তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর কিট এখনো অনুমোদন পায়নি। পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি এই কিট নিয়েও বিভিন্ন রকমের দুর্নীতি চলছে, ব্যবসা চলছে, বাণিজ্য চলছে। মানুষের এই দুর্দিনে যারা মানুষের স্বাস্থ্যকে, জীবনকে পূঁজি করে বাণিজ্য করার, ব্যবসা করার সুযোগ দেয় সেই সরকারকে কি আমরা দুর্নীতিমুক্ত বলতে পারব? পারব না। আমরা তাই আশা করব, তারা (সরকার) ভুল-ত্রুটিগুলো শুধরিয়ে নিয়ে জনগণের জন্য কাজ করবে।

কৃষি ও কৃষকের স্বার্থে ১০ দফা

করোনা ভাইরাসের কারণে কৃষি ও কৃষকদের নাজুক-দুর্বিসহ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১০ দফা প্রস্তবানা তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব।

এসবের মধ্যে আছে, আগামী এক বছর পোল্ট্রি ও ডেয়রিসহ সব ধরনের কৃষি ঋণের কিস্তি সুদসহ মওকুফ; বীজ, সার, কীটনাশক, সেচ ও ভর্তুকিসহ প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ; কৃষিপণ্যসহ আম, লিচু কাঁঠাল, পেয়ারা প্রভৃতি ফল সরকারি উদ্যোগে বাজারজাত নিশ্চিতকরণ; কৃষকদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি, কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে কমপক্ষে তিন মাসের সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান; কৃষকদের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ে অতিরিক্ত ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ; প্রান্তিক চাষি ও ক্ষেতমজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণ ও কৃষকদের ওপরে হয়রানি বন্ধ করে তাদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল ক্রয়ের ব্যবস্থা।

১০ জুন কৃষকদলের স্মারকলিপি

বর্তমান পরিস্থিতিতে কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে বিএনপির অঙ্গসংগঠন জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের নেওয়া কর্মসূচি ঘোষণা করেন মির্জা ফখরুল।

১০ জুন প্রতিটি জেলায় প্রকৃত কৃষকদের কাছ থেকে চলতি মৌসুমে বোরো ধান ক্রয়ের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি পেশ; আর্থিক ও পরিবহন সংকটে যেসব কৃষক ধান বিক্রি করতে পারছে না তাদের কৃষকদল থেকে সহায়তা প্রদান এবং প্রান্তিক কৃষকদের মধ্যে চলমান ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত রাখা।

সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে প্রয়াত শিল্পপতি আব্দুল মোনেম, টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব মোস্তফা কামাল সৈয়দ, শিক্ষাবিদ আবদুল কাদের ভুঁইয়াসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে নিহতদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মির্জা ফখরুল।

এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, তাঁর স্ত্রী শিরিন পারভীন হক, ছেলে বারিশ হাসান চৌধুরী, প্রবীণ আইনজীবী আবদুর রেজ্জাক খান ও তাঁর স্ত্রীসহ সাংবাদিক ও চিকিৎসকের আশু রোগমুক্তি কামনা করেন বিএনপির মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু, সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন, সদস্য মেহেদি হাসান পলাশ, অধ্যাপক শামসুর রহমান শামস, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজউদ্দিন নসু, চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান ও শামসুদ্দিন দিদার উপস্থিত ছিলেন।

LEAVE A REPLY