ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ।। ‘অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পাঠাইছি। সে তো শুধু একটি চাকরি চাইছিল। তার দোষ কী? আমি বাবা হিসেবে ছেলের মুক্তি চাই।’
আজ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের বাবা নবাই বিশ্বাস।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে রাশেদের পরিবার।
নবাই বিশ্বাস বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করি। অনেক কষ্ট করে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাইছি পড়ালেখা করতে। সে সাধারণ ছাত্রদের স্বার্থে আন্দোলন করেছে। একটা চাকরির জন্য আন্দোলন করেছে। কিন্তু তার মতো একজন মেধাবী ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে রিমাণ্ডে নিয়েছে পুলিশ। সে কোথায় আছে,কেমন আছে তাও আমরা জানি না।’
রাশেদের বাবার অভিযোগ, রাশেদকে আটকের একদিন আগে এক ছাত্রলীগ নেতা তাঁকে (নবাই বিশ্বাস) ফোন দিয়ে গালাগালি করেন।
তিনি কিংবা রাশেদ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত কিনা জানতে চাইলে নবাই বিশ্বাস বলেন, ‘আমি রাজমিস্ত্রির কাজ করে সংসার চালাই। আমি একজন দিনমজুর। রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রশ্নই আসেনা। আর রাশেদ টিউশনি করে লেখাপড়া ও সংসারের খরচ জোগাড় করে। সে কখন রাজনীতি করবে?’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন,রাশেদের মা সালেহা বেগম,ছোট বোন সোনিয়া আক্তার ও স্ত্রী রাবেয়া আলো।
রাশেদের মা সালেহা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন,‘আমি এক সময় মাইনষের বাসায় কাজ কইরেছি। কত কষ্টে আমি আমার মনিরে (রাশেদ) মানুষ কইরিছি। খাইয়ে না খাইয়ে আমার মনিরে বিশ্ববিদ্যালয় পাঠাইছি। আর ওরা আমার মনিরে হাতকড়া পড়াইলো! ওরাতো শুধু একটা চাকরি চাইছিল।’
রাশেদের স্ত্রী রাবেয়া আলো বলেন,‘গ্রেপ্তারের দিন সকাল থেকেই বাসার সামনে সাদা পোশাকে পুলিশ এসে লোকজনের কাছে খোঁজ নিতে থাকে যে,এই বাসায় রাশেদ নামে কেউ থাকে কিনা। এক পর্যায়ে তারা বাসায় ঢুকতে চাইলে রাশেদ দৌড়ে গিয়ে অন্য একটি বাসায় আশ্রয় নেয়। সেখান থেকেই ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করে। পরে ওই বাসা থেকে পুলিশ রাশেদকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যায়। আমি প্রতিবাদ করলে আমাকে পুলিশ অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। রাশেদ কয়েকটি টিউশনি করেন। বাসায় এসেও ছাত্ররা তার কাছে পড়ে। টিউশনিই একমাত্র ইনকামের পথ। আমি নিজেও টিউশনি করি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো.আতাউল্লাহ। তিনি বলেন,‘আমরা এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। আমাদেরকে রাস্তায় দেখলেই ছাত্রলীগ মারধর করে পুলিশে দিচ্ছে। পুলিশও আমাদের কোনো কথা শুনছে না। ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা আমাদের যাকে পাচ্ছে,তাকেই মারছে। মেয়েরাও রেহাই পাচ্ছে না। আমরা ক্যাম্পাসে যেতে পারছি না।আমরা এতটাই আতঙ্কে আছি যে, সংবাদ সম্মেলন শেষে এখান থেকে বের হয়ে নিরাপদে বাসায় যেতে পারব কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’