0
630

ভূমিকম্প, ভূমিধস, সড়ক দুর্ঘটনা, অগ্নিকাণ্ডসহ যেকোনো দুর্যোগে সবার আগে যারা দৌড়ে গিয়ে পাশে দাঁড়ায়, তাদের নিজস্ব কার্যালয়ই আজ ঝুঁকির মুখে। মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের কার্নিশসহ বিভিন্ন অংশের ধস ঠেকাতে বাঁশের খুঁটি ব্যবহার করা হয়েছে।

কিন্তু ফায়ার সার্ভিসকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের পুরাতন দোতলা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়ায় তাদের জীবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভবনটির ছাদ, কার্নিশসহ বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে একাধিক বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। ভবনটির দুরাবস্থার কারণে মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশঙ্কায় আতঙ্কগ্রস্ত থাকেন সব সময়।

মাগুরা জেলা শহরের ভায়না এলাকায় ১৯৬৮ সালে নির্মিত মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন অফিস। কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ৪৯ বছর আগে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটিই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।

ভবনটির নিচতলায় রয়েছে স্টেশন অফিসারের অফিস কক্ষসহ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখার জায়গা এবং দ্বিতীয় তলায় রয়েছে এখানকার কর্মকর্তা এবং স্টাফদের ব্যারাক। যেখানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিয়মিত বসবাস করতে বাধ্য হন ২৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। ভবনটির ব্যারাকে বসবাসকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন সাব-অফিসার, ১৭ ফায়ারম্যান, তিনজন টিম লিডার গাড়ির চালকরা। এই কক্ষের পাশের দুটি কক্ষ ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে খাবার ঘর ও রান্নাঘর হিসেবে।

দ্বিতীয় তলায় উঠতেই দেখা গেল যে, এখানকার প্রত্যেকটি কক্ষের দেয়াল এবং ছাদের পলেস্তোরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় তলার ছাদসহ এবং কার্নিশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ব্যারাকের রান্নাঘরসহ বিভিন্ন জায়গার ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়তে শুরু করে।

বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে সেখানে পলিথিন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বর্তমানে অবস্থা এমন যেকোন সময় এখানকার ভবনটি ধসে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ব্যারাকে বসবাসকারী ফায়ারম্যানসহ অফিস ভবনে অবস্থানকারী কর্মকর্তাদের প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

মাগুরা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দোতলা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৬৮ সালে। নির্মাণের পর থেকে রং করা ছাড়া ভবনটির যথাযথ সংস্কার হয়নি কখনোই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই এর অবকাঠামো দুর্বল হয়ে ভবনটি বর্তমানে ধসে পড়ার মতো অবস্থায় পৌঁছেছে।

মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মনিরুজ্জামান বললেন, ভবনটির ভগ্নদশা বেশ কয়েক বছর ধরে। আমরা কয়েকবার লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করি। ২০১৬ সালে গণপূর্ত বিভাগের একটি দল পরিদর্শন শেষে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও অদ্যাবধি সংস্কারের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়েই তারা ভবনটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গত ও বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করতে কাজ করি আমরা, আজ আমাদের জীবনই ঝুঁকিপূর্ণ। চরম আতঙ্ক এবং অসহনীয় দুর্ভোগের কথা জানান মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ব্যারাকে বসবাসরত ফায়ারম্যান আব্দুল কাদির। এ প্রসঙ্গে আক্ষেপের করে তিনি আরো বলেন, ‘আমরাও মানুষ আমাদের স্ত্রী-সন্তান, পরিবার আছে তাদেরও প্রতি মুহূর্তে কাটাচ্ছে দুশ্চিন্তায়। ‘ভাড়াবাসায় বসবাস করার সামর্থ্য থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যারাকে থাকতাম না।’

ফায়ার সার্ভিস স্টেশন নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমাদের লিখিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গণপূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ‘ডিজাইন ডিভিশন’-এর একটি টিম ভবন এলাকা পরিদর্শন করে গেছে। আর্থিক বরাদ্দ পেলেই নতুন ভবন নির্মাণের শুরু করা হবে।

LEAVE A REPLY