‘শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে পা রেখে ক্ষমতায় যেতে চক্রান্ত করেছিল’

0
419

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেটঃ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুচক্রী মহল, তথাকথিত কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও কিছু বুদ্ধিজীবী বাসচাপায় দুজন স্কুলশিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যুর পর বিক্ষোভকারী কোমলমতিদের অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের পাঁয়তারা করেছিল। তারা শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে পা রেখে ক্ষমতায় যাওয়ার চক্রান্ত করেছিল।’

শোকের মাস আগস্টের শেষ দিনে আজ বিকেলে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, চক্রান্তের ফলে কোমলমতিদের যে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে, তা এই কুচক্রী মহল, সুশীল, বুদ্ধিজীবীরা চিন্তাও করেনি।

প্রধানমন্ত্রী নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুলশিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ক্ষেত্রে নেপথ্য ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বলেন, তথাকথিত সুশীল সমাজের একটি অংশ এখন গ্রেপ্তার হওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের ছাড়াতে মায়াকান্না করছে, এমনকি বৈশ্বিকভাবেও সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কিন্তু সবার একটা বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখা উচিত, সরকার নীতির প্রশ্নে কোনো চাপের কাছেই নতি স্বীকার করবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রেতাত্মারা এখন দেশের শান্তি ও প্রগতির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরাই করে দিয়েছি। সেই আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করে ফায়দা লুটতে চেয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে পড়ালেখায় মনোনিবেশের পাশাপাশি পদের প্রতি মোহ থেকে নয়, আদর্শভিত্তিক রাজনীতিতে আত্মনিবেদন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, তিনি এবং তাঁর ভাই শেখ কামাল ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। একজন কর্মীর মতো কাজ করেছেন, যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা সম্পাদন করেছেন। কিন্তু পদের দিকে তাকাননি।

জাতির পিতা রাজনীতির জন্য জীবনের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের কথা চিন্তা করে, তাদের কল্যাণের কথা ভেবে, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য যাঁরা রাজনীতি করেন, ইতিহাস তাঁদেরই স্বীকৃতি দেয়। ইতিহাস তাঁদেরই মর্যাদা দেয়। ইতিহাসে তাঁদেরই নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকে এবং শত চেষ্টা করেও সে নাম মোছা যায় না। আর সেই দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

সমকালীন রাজনীতির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘অথচ কেউ রাজনীতি করেন শুধু নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, কেউ রাজনীতি করেন রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় অর্থ–সম্পদের মালিক হওয়ার জন্য, কেউ করেন সামাজিকভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আদর্শবানদের রাজনীতি শুধু অনুকরণ নয়, অনুশীলনের চেষ্টা করলেই দেশকে কিছু দেওয়া যায়।’

শেখ হাসিনা বলেন, একজন রাজনীতিকের জীবনে শুধু এই চিন্তা-চেতনাই থাকা উচিত, রাজনীতি শুধু হিসাব কষার জন্য নয়, কী মূল্যায়ন পেলাম সে হিসেব কষার জন্য নয়, কতটুকু দেশকে দিতে পারলাম, কতটুকু মানুষের জন্য করতে পারলাম, কতটুকু মানুষকে দিয়ে যেতে পারলাম- সেখানেই সবচেয়ে বড় তৃপ্তি। সেটাই সব থেকে বড় পাওয়া। তিনি বলেন, এইভাবে চিন্তা করে যাঁরা রাজনীতি করেন, তাঁদের কিছু চাইতে হয় না, ইতিহাস তাঁদের মূল্যায়ন করে।

বঙ্গবন্ধুর ছায়াসঙ্গী বেগম মুজিবের জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গমাতা কেবল সারা জীবন দিয়ে গেছেন, কিন্তু নিজের মর্যাদা নিয়ে কখনো চিন্তা করেননি। যে কারণে এ দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী হয়েও তিনি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতেই একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত জীবন কাটিয়ে গেছেন। ইতিহাসের সন্ধিক্ষণে যিনি কঠিন সিদ্ধান্ত দিতে পারেন, তিনিই ইতিহাস সৃষ্টি করেন, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জাতির প্রয়োজনে এই মহীয়সী নারীর কিছু যুগান্তকারী ভূমিকারও উল্লেখ করেন।

বেগম মুজিবের একটি সিদ্ধান্ত বাঙালিকে মুক্তির সংগ্রামে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছিল, উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ’৬৯–এর গণ-অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপট স্মরণ করে বেগম মুজিবের পরামর্শে জাতির জনকের প্যারোলে মুক্তি নিয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দিতে না যাওয়ার স্মৃতিচারণা করেন। তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান সরকার আম্মাকে ভয় দেখান, বঙ্গবন্ধু প্যারোলে মুক্তি না নিলে তিনি বিধবা হবেন। অথচ, আম্মা সোজা বলে দিলেন, কোনো প্যারোলে মুক্তি হবে না। নিঃশর্ত মুক্তি না দিলে কোনো মুক্তি হবে না। প্যারোলে মুক্তি নিলে মামলার আর ৩৪ জন আসামির কী হবে?’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের ফলে পাকিস্তান সরকার আব্বাকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এর আগে ১৯৬৬ সালে বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষণা করে জনমত সৃষ্টির জন্য সারা দেশে জনসভা করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু আটবার গ্রেপ্তার হন। তখন কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা ৬-দফাকে ৮-দফায় রূপান্তরের চেষ্টা বেগম মুজিবের জন্য ভেস্তে যায়।’ তিনি বলেন, ৬ দফা আন্দোলনের সময় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা কারাবন্দীদের মুক্তির জন্য ৭ জুনের হরতাল সফল করা। সেটাও সফল হয়েছিল বেগম মুজিবের প্রচেষ্টায়। তিনি নিজ বাসা থেকে আত্মীয়ের বাসায় গিয়ে সেখান থেকে স্যান্ডেল আর বোরকা পরে জনসংযোগে বেরিয়ে পড়তেন।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সময় বেগম মুজিব পুলিশ ও গোয়েন্দাচক্ষুর আড়ালে দলকে শক্তিশালী করেছেন। বিচক্ষণতার সঙ্গে ছাত্রদের তিনি নির্দেশনা দিতেন এবং অর্থ সরবরাহসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করতেন। এমনকি নিজের গয়না বিক্রি করেও অর্থ জুগিয়েছেন।

ইউনেসকো কর্তৃক ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দিন নানা জনে নানা পরামর্শ দিচ্ছে। আম্মা তখন একটি ঘরে বিশ্রামের সুযোগ করে দিয়ে মোড়া টেনে মাথার কাছে বসে বঙ্গবন্ধুকে কিছুক্ষণ চোখটা বন্ধ করে রাখতে বললেন। আম্মা বললেন, “তোমার যা মনে আসে তা–ই তুমি বলবে। তুমি রাজনীতি করেছ, কষ্ট সহ্য করেছ, তুমি জানো কী বলতে হবে। কারও কথা শোনার দরকার নাই।”’

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানীও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

LEAVE A REPLY