গতকাল সশস্ত্র কিছু লোক লকডাউন প্রত্যাহার করতে বাধ্য করার জন্য মিশিগান রাজ্য গভর্নর অফিসে আকস্মিক আক্রমণ করে বসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এখন করোনা বিষয়ে বিজ্ঞানকে অনুসরণ করা হবে, নাকি লকডাউন অব্যাহত রাখা উচিত- এই নিয়ে বিতর্ক চলছে। ট্রাম্প সমর্থিত গোষ্ঠীগুলি লকডাউন প্রত্যাহার এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম পুনরায় চালু করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে, আমি নিশ্চিত যে বাংলাদেশে এটি ঘটবে না, আমাদের মানুষজন ইতিমধ্যে পরিস্থিতি উপলব্ধি করতে পেরেছে এবং বিকল্প জীবন ব্যবস্থার সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে শুরু করেছে। আমাদের গার্মেন্টস কারখানাগুলো খুলতে হয়েছে ; করোনা থেকে সুরক্ষার বিধি সেখানে প্রয়োগ করা হচ্ছে; বিভিন্ন যন্ত্রপাতি এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস আমদানি করার জন্য আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন, এবং আমরা ভিয়েতনাম এবং অন্যান্য দেশগুলির কাছে বাজার হারাতে পারি না। তবে লকডাউন থেকে বেরিয়ে আসার অর্থ এই নয় যে, সবাইকে টিকা দেওয়ার আগেই পুরোপুরিভাবে আমরা করোনা সংকটের বাইরে চলে যাব, ২০২১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত সবাইকে টিকার আওতায় হয়ত নিয়ে আসা যাবে। আমাদের-করোনা প্রতিরোধী ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে, যা কেবল শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই নয়, হাত ধোয়া, মাস্ক পরা ইত্যাদির মতো করোনা প্রতিরোধী ব্যবস্থাগুলো ঘরে এবং ব্যক্তি পর্যায়ে নিশ্চিত করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, লকডাউন প্রত্যাহারের আগে করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার গতি বাড়াতে হবে, আমাদের বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবাগুলিকে প্রচুর পরিমাণে বাড়াতে হবে; বাড়ি ভিত্তিক এবং প্রাতিষ্ঠানিক পৃথকীকরণ বা কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া দুটোই জোরদার করতে হবে; বিশেষ করে রাস্তাঘাটে ও গণপরিবহনগুলোতে জীবাণুমুক্তকরণের জন্য আমাদের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের ধীরে ধীরে এবং সাবধানী ধারাবাহিতকতার সঙ্গে লকডাউন অবস্থা থেকে বের হতে হবে। এক্ষেত্রে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের সরবরাহ ও উৎপাদন ব্যবস্থার সম্পূর্ণভাবে খুলে দেওয়া, সরকারের উদ্যোগের ফলে এটি ইতিমধ্যে আংশিকভাবে খোলা হয়েছে, বিশেষত শহরে কৃষি পণ্যের দাম কম-বেশি স্থিতিশীল। বেসরকারি ও সরকারি সব অফিসগুলোতেই জীবাণুনাশক ব্যবহার, শারীরিক দূরত্ব এবং মৌলিক জৈব নিরাপত্তা বিধি কঠোরভাবে বজায় রাখতে হবে, এটি কেবল সরকারের নয়, এটি আমাদের নাগরিক দায়িত্বও। যেহেতু ব্যাংকগুলি আংশিকভাবে চালু আছে, গ্রামীণ অঞ্চলের জন্য, আমাদের উচিত অর্থনৈতিক অন্যতম চালিকাশক্তি ক্ষুদ্রঋণ সংস্থা খুলে দেওয়া। কারণ এটি কৃষি ও অকৃষিখাতে পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থা এবং এর সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর জীবিকার অন্যতম চালিকাশক্তি। আমাদের কৃষি উৎপাদনে অতীতের মতোই গতি অব্যহত রাখতে হবে। ভারত এবং ভিয়েতনামের মতো দেশ এবং কয়েকটি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ ইতিমধ্যে খাদ্য রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে। আমি নিশ্চিত যে, আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়ব না যে আমাদের ডলার থাকা স্বত্ত্বেও আমরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাবার কিনতে পারব না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের কৃষি পণ্য উৎপাদনে সর্বাধিক মনযোগ দিচ্ছেন, আমরা হাওর অঞ্চলে বোরো ধান সংগ্রহ করতে চলেছি। ভারত লকডাউনটি ১৭ মে অবধি বাড়িয়েছে, তবে দেশটি বিভিন্ন এলাকাকে লাল, হলুদ এবং সবুজ অঞ্চলে ভাগ করেছে। করোনা যেখানে বাড়ছে সেখানে লাল, তারা সেখানে একটি সম্পূর্ণ লকডাউন অনুসরণ করছে। হলুদ রং সেসব অঞ্চলের জন্য, যেখানে করোনা স্থিতিশীল সেখানে তারা পর্যবেক্ষণ করছে এবং সাবধানতা অবলম্বন করছে, পুরো খোলা নয়, সম্পূর্ণ লকডাউনও নয়। আর সবুজ রং সেসব অঞ্চলের জন্য যেখানে কোনও করোনা নেই বা এটি বাড়ছে না, সেখানে অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ খুলছে। আমরা ভারত থেকে শিক্ষা নিতে পারি। তবে একজন নাগরিক হিসাবে আমাদের বুঝতে হবে যে, সবাইকে টিকা দেওয়া না হওয়া অবধি করোনা সংকট থেকে সম্পূর্ণ মুক্তি অসম্ভব, আমাদের করোনার প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্য এবং জৈব নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। লকডাউন থেকে সম্পূর্ণ বাইরে চলে আসা এই মুহূর্তে সম্ভব নয় এবং উচিতও নয়। স্বাস্থ্য সুবিধাগুলি (পরীক্ষা, চিকিৎসা, এবং পৃথকীকরণ বা কোয়ারেন্টাইনসহ) আরও দ্রুত কতটুকু জোরদার করা হয়েছে সেটা বিবেচনায় এনে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমের অগ্রাধিকারগুলো চিহ্নিত করে, ক্রমান্বয়ে আমাদেরকে লকডাউন খুলে দিতে হবে।