এইচ এম জাকির, ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ॥ নতুন লঞ্চ মালিকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে সংকটে পড়েছে দ্বীপজেলা ভোলার নৌরুটে লঞ্চ পরিবহন ব্যবসা। যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে মাত্র ২০ টাকা ভাড়ায় চরফ্যাশন-ঢাকা রুটে যাতায়াতের সুযোগ করে দিচ্ছে নতুন লঞ্চ গুলো। ফলে বাধ্য হয়ে পুরনো দের লোকসান দিয়ে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে, নতুবা রুট পরিবর্তন বা লঞ্চ বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। অথচ প্রায় ৩০০ কিলোমিটার এ নৌপথের যেখানে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৩৭৪ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চ ঘাট থেকে ঢাকা পর্যন্ত ২৭৪ কিলোমিটার পথে সরকার নির্ধারিত ভাড়া— ডেক ৩৭৪ টাকা, ডবল কেবিন ২ হাজার এবং সিঙ্গেল কেবিন ১ হাজার টাকা। প্রায় একযুগ ধরে ফারহান নেভিগেশনের দুটি লঞ্চ এভাবে চলাচল করে আসছে। গত বছরের ১০ অক্টোবর ফেয়ারি শিপিং লাইনস লিমিটেডের দুটি লঞ্চ এ রুটে যুক্ত হয়। এরপরই শুরু হয় যাত্রী বাগানোর প্রতিযোগিতা। বেতুয়া ঘাট থেকে ১০০ টাকা এবং ঢাকার সদরঘাট থেকে ১৫০ টাকায় যাত্রী বহন শুরু করে তারা। এ নিয়ে লঞ্চ স্টাফদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের খবরও এসেছে গণমাধ্যমে। এ অবস্থার মধ্যেই ৮ এপ্রিল ব্রাদার্স নেভিগেশনের দুটি লঞ্চ যুক্ত হয়। এবার প্রতিযোগিতার আর পরিবেশ থাকে না। যাত্রী টানতে ভাড়া নেমে আসে ১০ থেকে ২০ টাকায়!সম্প্রতি সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চরফ্যাশন উপজেলার বেতুয়া লঞ্চ ঘাটে তিনটি লঞ্চ স্টাফরা ২০ টাকা, ২০ টাকা, ২০ টাকা করে হাঁকডাক দিচ্ছেন। অর্থাত্ বেতুয়া-ঢাকা ভাড়া মাত্র ২০ টাকা! এ লঞ্চ গুলো জেলার অন্য উপজেলার লঞ্চ ঘাটগুলো থেকেও বিশেষ করে লালমোহনের মঙ্গল সিকদার, তজুমদ্দিন, দৌলতখান এবং ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি ও ইলিশা লঞ্চ ঘাটে নোঙ্গর করে যাত্রী তুলছে। যাত্রীরাও মাত্র ৪০ টাকায় ঢাকা-ভোলা ভ্রমণের সুযোগ লুফে নিচ্ছেন।
ভাড়া অস্বাভাবিকভাবে কমে যাওয়ায় যাত্রীরা খুশি হলেও ভোলার লঞ্চ ব্যবসায় নামছে ধস। এমভি ফারহান-৫ লঞ্চ ম্যানেজার জাহিদ বলেন, প্রতিদিন চরফ্যাশনের বেতুয়া লঞ্চ ঘাট থেকে তিনটি লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে ঢাকায়। আমরা আগে ডেকের ভাড়াই নিতাম ৩০০ টাকা। এমভি তাসরিফ-৩ ও তাসরিফ-৪ আসার পর ভাড়া অর্ধেকেরও বেশি নেমে গেছে। বাধ্য হয়ে বেতুয়া ১০০ টাকা, ঢাকার সদরঘাট থেকে ১৫০ টাকা নিচ্ছি। এখন আবার এমভি কর্ণফুলী-১২ ও কর্ণফুলী-১৩ এসে ২০ টাকায় যাত্রী তুলছে। আমাদেরকেও ২০ টাকা নিতে হচ্ছে। তারা যদি ফ্রি দেয়, হয়তো আমাদেরকেও ফ্রি দিতে হবে!
একই কথা বলেন এমভি ফারহান-৫ লে র পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এতে করে প্রতিদিন ঢাকা-চরফ্যাশন রুটের যাতায়াতকারী ছয়টি লঞ্চ কেই মোটা অংকের লোকসান গুনতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এদিকে চরফ্যাশন থেকে ছেড়ে আসা তিনটি লঞ্চ ই ভোলার অন্যসব উপজেলার লঞ্চ ঘাটগুলোয় যাত্রী তোলায় স্থানীয় লঞ্চ গুলো যাত্রী পাচ্ছে না। কম খরচে তারা চরফ্যাশনের লঞ্চকরেই ঢাকা-ভোলা যাতায়াত করছেন। লোকসানের মুখে এরই মধ্যে ঢাকা-দৌলতখান ও ঢাকা-লালমোহন রুটের তিনটি লঞ্চ অন্য রুটে চলাচল করছে। দৌলতখান-ঢাকা রুটের এমভি ফ্লোটিলা লঞ্চ মালিক এ. রহমান অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী গোলাম নবী আলমগীর বলেন, একযুগেরও বেশি সময় ধরে তারা এ রুটে দুটি লঞ্চ চালিয়ে আসছেন। সম্প্রতি চরফ্যাশনের কয়েকটি লঞ্চ ১০ থেকে ২০ টাকায় যাত্রী আনা-নেয়া করায় আর যাত্রী পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে তারা রুট পরিবর্তন করেছেন।
অযৌক্তিকভাবে ভাড়া কমানোর বিষয়ে জানতে চাইলে চরফ্যাশন-ঢাকা রুটে সর্বশেষ যুক্ত হওয়া দুটি লঞ্চ মালিক প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স নেভিগেশনের একজন অংশীদার জসিম উদ্দীন বলেন, আমরা নতুন এসেছি। এ কারণে যাত্রীদের আকৃষ্ট করতে এটা আমাদের মার্কেটিং পলিসি। এতে করে কেউ যদি টিকতে না পারে, তাতে আমাদের কী করার আছে!
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিএর পরিচালক আবু জাফর হাওলাদার বলেন, ঢাকা-চরফ্যাশন রুটে ছয়টি লঞ্চ চলাচল করছে। দেখা যাচ্ছে প্রতিদিনই সংঘাত-সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। অথচ মালিকপক্ষ নিজেরা বসে ভাড়া নির্ধারণ করলে এসব সমস্যা থাকে না। এরই মধ্যে কয়েকটি রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা একটা সমাধান করার চেষ্টা করছি। এ পরিস্থিতিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেল ঞ্চ মালিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে মত দিয়েছেন ফেয়ারি শিপিংয়ের জেনারেল ম্যানেজার কাজী ইকবাল হোসেন।