ভোলা নিউজ২৪ডটকম।।ভোলার গ্রামে গ্রামে চলছে এক সময়ের জনপ্রিয় সংস্কৃতি পুঁথি গানের আসর। পুঁথি গানের আসরের মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বাল্য বিয়ে স¤পর্কে সচেতন করতে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। গানে গানে বাল্য বিবাহের ক্ষতিকারক দিকগুলো সুন্দরভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।
আয়োজকরা বলছেন গ্রামের মানুষকে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতন করতে গ্রাম বাংলার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি পুঁথি গানকে বেছে নিয়েছেন তারা।গেল ২০ জানুয়ারি থেকে চলছে এই গানের আসর কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ভোলায় বাল্য বিবাহ রোধ করতে সদর উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের বাড়িতে বাড়ি গিয়ে ভোলার সামাজিক সংগঠন স্বপ্নীল শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠনের একদল তরুণ-তরুণী পুঁথি গানের আসর করছেন। তাদের মূল্য লক্ষ ভোলা থেকে বাল্য বিবাহ সম্পূর্ণ রোধ করা।
ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট এর শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা তরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে পুঁথি গানের পাশাপাশি নাটকও পরিবেশন করেন তারা।
এদিকে ব্যতিক্রমী আয়োজনের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতন ও প্রতিরোধে বিষয়ে গ্রামের মানুষের কাছেও বেশ সাড়া পাচ্ছেন তারা।
ভোলা সদর উপজেলার চর ভেদুরিয়া গ্রামের মো. ইকবাল, সাহাবুদ্দিন, তাবাসুম ও মাওয়া জানান, গত কয়েক দিন ধরে শুনেছি গ্রামে গ্রামে পুঁথি গানের আসর হচ্ছে। আমাদের চর ভেদুরিয়া গ্রামের পুঁথি গানের আসর বসলে আমরা সবাই ছুটে আসি। আমরা পুঁথি গানের মাধ্যমে জানতে পারি ১৮ বছরের নিচে কোন মেয়েকে বিয়ে দিলে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয়। কারণ কম বয়সে মেয়েরা সংসার জীবন সম্পর্কে বুঝে না।
এছাড়াও কম বয়সে বিয়ের পর ওই মেয়ে যদি মা হয় তখন তার প্রসবের সময় প্রচুর ব্যাথা, প্রচুর রক্ত ক্ষনন হয়। এটা সে সহ্য করতে পারেনা। যার কারণে অনেক সময় সে মারা যায়। এছাড়াও বাল্য বিবাহ এর কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
তারা আরো জানান, এখানে এসে আমরা অনেক জ্ঞান অর্জন করেছি। যা আগে কখনও শুনি নাই। আমাদের বোন ও মেয়দের কখনও ১৮ বছরের আগে বিয়ে দিবো না। এমনকি আমাদের গ্রামে ১৮ বছরের নিচে কারো বিয়ে হতেও দিবো না।
সামাজিক সংগঠন স্বপ্নীল শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি ইভান তালুকদার জানান, ভোলা জেলায় বাল্য বিবাহ হার একটু বেশি। আমরা অভিভাবকদের বিভিন্ন সময় বুঝালেও তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। পরে আমরা স্বপ্নীল কিশোর সাংস্কৃতিক সংগঠন পুঁথি গানের আসরের আয়োজন করি। আমরা জানি যে ব্যতিক্রমী কোনো কিছুর মাধ্যমে গ্রামের মানুষকে বাল্য বিবাহের স¤পর্কে সচেতন করলে তারা বিষয়টি গুরুত্ব দিবে। এজন্যই আমরা এ পুঁথি গানের আসর করছি।
তিনি আরো জানান, পুঁথি গানের মাধ্যমে আমরা একটি স্কুলছাত্রীর জীবন কাহিনী তুলে ধরছি। সে ওই ছাত্রীর অল্প বসয়ে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। বিয়ের পর সংসার জীবনের নানান সমস্যা সৃষ্টি হয়। সে সন্তান সম্ভাবনা হলে তার স্বাস্থ্য ঝুঁকি বেরে যায় এবং রোগা হতে থাকে। পরে প্রসবের সময় তার মৃত্যু হয়। পুঁথি গানের কাহিনীগুলো গ্রামের মানুষগুলো অধিক গুরুত্ব দিচ্ছেন। গত বুধবার থেকে আমরা পুঁথি গানের মাধ্যমে সচেতনতা করে যাচ্ছি।
কোস্ট ট্রাস্টের শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা তরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. মিজানুর রহমান জানান, ভৌগলিক কারনে দেশের অন্যান্য জেলা থেখে ভোলায় বাল্য বিয়ের হার অনেক বেশি। বিশেষ করে নদী ভাঙ্গন ও চরাঞ্চল বেশি থাকার কারনে মেয়েদের অভিভাবকরা দ্রুত বিয়ে দিয়ে দিয়। তাই এই সব মানুষদের সচেতন করতে কোস্ট ট্রাস্ট ইউনিসেফ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষা তরান্বিতকরণ (এপিসি) প্রকল্পের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ প্রতিরোধে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে সহায়তা করছে।এর মাধ্যমে মানুষ বিনোদন পাওয়ার পাশাপাশি সচেতনতা মূলক বার্তা পৌছে দিয়া হচ্ছে। যাতে করে বাল্য বিয়ের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।
উল্লেখ্য বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে বাল্য বিয়ের হার ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ। এবং ভোলা জেলায় বাল্য বিয়ের হার ৫৬ দশমিক ৬ শতাংশ।