ইমতিয়াজুর রহমান।। হিমালয় থেকে নেমে আসা তিনটি প্রধান নদী পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র বাহিত পলি দিয়ে মোহনার বুকে জেগে উঠেছে দ্বীপ জেলা ভোলা। ভোলায় উৎপাদিত মেঘনার রুপালী ইলিশ, মহিষের দুধের টক দই, ভোলার ঘুইংগার হাটে ছানার তৈরি মিষ্টি, পান, সুপারি,ধানের জন্য অন্য জেলা শহর গুলোতে ভোলার খ্যাতি রয়েছে অনেক। ঠিক তেমনি তাদের মাঝে স্থান করে নিয়েছে ভোলার ডাব নারিকেল।
প্রচন্ড গরমের ভোলার ডাবের কদর বেড়েছে রাজধানী ঢাকা সহ দেশের বড় বড় জেলা শহর গুলোতে। শুধু গরম নয় বছরের ১২ মাস রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন হাসপাতাল ও বড় বড় অফিস আদালতের সামনে বিক্রি হয় ডাব নারিকেল। বিক্রেতারা তা ভোলার ডাব বলে সচরাচর বিক্রয় করছে। বিক্রিও হচ্ছে জমজমাট।
ভোলায় প্রতিমাসে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টাকার ডাব কেনাবেচা হচ্ছে। এর মধ্যে জেলা থেকে প্রতিমাসে কমপক্ষে ১৪ লাখ টাকার ডাব যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায়। আর বাকি ডাব বিক্রি হচ্ছে স্থানীয়দের কাছে। জেলায় ছোট বড় প্রায় ৫০ জন ডাব ব্যবসায়ী এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এ ব্যবসায়। জেলার কোথাও বাণিজ্যিকভাবেএর চাষ হয় না। বসত বাড়িতে, পতিত জমিতে, উঁচু জমিতে, ঘেরের পাড়সহ বিভিন্ন জমিতে লাগানো গাছ থেকে উৎপাদিত ডাবই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখন যাচ্ছে ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায়।
ভোলা জেলার ডাব ব্যবসায়ী মোঃ তরিক এই ব্যবসা করেন ১২ বছর যাবত। তিনি জানান, সামান্য পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। তখন এলাকা থেকে তিনি নিজে ডাব কিনে পাইকারদের কাছে বিক্রয় করতেন। দিনে দিনে ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। এখন তিনি প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৩টি ট্রাকে করে ডাব ঢাকা, চট্রগ্রাম সহ বিভিন্ন বড় বড় জেলায় পাঠান। তাতে প্রতি ট্রাকে ৬০-৬৫ হাজার টাকার ডাব পাঠান তিনি। এতে একটি ট্রাকে ভাড়া বাবদ খরচ যায়
১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা প্রতি পিস ডাব ঢাকা পাঠাতে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ টাকা। জেলার বিভিন্ন এলাকায়, গ্রামে তাদের ৩৫-৪০ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছে। প্রতিটা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছে ৫ থেকে ৫০ হাজার করে টাকা রয়েছে। এক জন ছোট ব্যবসায়ী প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকাতে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন বাড়ির গাছ থেকে ডাব কিনে, তারা নিজেরা গাছ থেকে ডাব সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।
জানা যায়, গাছ থেকে সংগ্রহ করা ডাব তিনটি গ্রেডে ভাগ করা হয়। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা স্থানীয়দের কাছ থেকে আকার ভেদে এই ডাব ক্রয় করে ১০ টাকা ১৩ টাকা ও ১৫ টাকা করে। স্থানীয় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে সেই ডাব তারা বিক্রি করে ২০ থেকে ২৫টাকা করে। বড় ব্যবসায়ীরা এই ডাব ঢাকাসহ বড় শহরে নিয়ে পাইকারী বিক্রি করে ২৮ থেকে ৩৫ টাকা পিস। রাজধানী ঢাকা সহ বিভিন্ন জেলায় তা খুচরা বিক্রয় ৫০টাকা ৫৫ টাকা কিংবা ৬০ টাকা করে।
খুচরা ব্যবসায়ী হাবিব জানান, তার মত প্রতিটি ব্যবসায়ী দিনে ৮০ থেকে ১২০টি পর্যন্ত ডাব বিক্রয় করেন। আকার ভেদে প্রতিটি ডাব ২৫ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি করেন তারা। তিনি আরো বলেন ভোলা শহরে ৫০ জন ভ্রাম্যমাণ ডাব ব্যবসায়ী দিনে অন্তত, ৩ হাজার ডাব বিক্রি করেন স্থানীয়দের কাছে। ভোলা জেলায় বিভিন্ন হাটে-বাজারে এরকম অন্তত শতাধিক ক্ষুদ্র ডাব ব্যবসায়ী রয়েছে। যারা প্রতিদিন এই ব্যবসা করেই সংসার চালায়।
গাছের মালিক মোঃ জোবায়ের মিয়া জানান, পূর্ব থেকে ভোলা জেলায় প্রচুর নারিকেল গাছ রয়েছে। এই জেলায় নারিকেলের ফলন খুব ভালো। আমাদের প্রায় ২০০ নারিকেল গাছ রয়েছে যা থেকে প্রতি মাসেই আমি ডাব বিক্রি করি। ডাব ব্যবসায়ীদের আমার খুঁজে আনতে হয় না। গাছের ডাব বিক্রয় এর উপযুক্ত হলে তারা নিজেরা এসে তা খুব যত্ন সহকারে গাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে যায়। আগে দুটি নারিকেল বিক্রয় করে পেতাম ২০ থেকে ২২ টাকা আর এখন দুটি ডাব বিক্রয় করে পাচ্ছি ৩০ থেকে ৩২ টাকা। এখন ডাব বিক্রয় করে অনেক টা লাভবান।
ডাব ব্যবসায়ীরা বলেন ভোলা থেকে বিভিন্ন জেলার সাথে যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো থাকলে। লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সিন্ডিকেট বন্ধ হলে এবং ভোলা ইলিশা রুটের ফেরী চলাচল স্বাভাবিক হলে হয়ত এই ডাব নারিকেল এর ব্যবসা করে কিছুটা লাভবান হবো। পরিবার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো।
দৈনিক আজকের ভোলা পএিকার সম্পাদক মুহাম্মদ শওকাত হোসেন এর কাছে ডাবের উপকারিতা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন ডাবে প্রচুর পটাসিয়াম থাকে এছাড়া ডাবের পানির অসংখ্য গুনাগুণ রয়েছে যা মানুষের শরীরের জন্য খুবই উপকারী। শিশুসহ সকল মানুষের পরিমানমত ডাবের পানি পান করা উচিত। তবে খালি পেটে ডাবের পানি পান না করে কিছু খাওয়ার পর এই পানি পান করার পরামর্শ দেন তিনি।