ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। হঠাৎ করে দ্বীপ জেলা ভোলায় দেখা মিলছে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। ছড়িয়ে পড়েছে একের পর এক উপজেলায়। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো উপজেলার নদীর তীরে, বসতবাড়ি, ফসলের মাঠ ও রাস্তা থেকে উদ্ধার হচ্ছে এই সাপ। এতে আতংকে আছেন জেলার নদীর পাড় ও বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চলের মানুষ।
গত ১২দিনে ভোলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২টি রাসেলস ভাইপার (চন্দ্রবোড়া) উদ্ধার করা হয়েছে। এতে এলাকাবাসী আতঙ্কিত হয়ে ২০টি মেরে ফেলে এবং একটি সাপ বনবিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জেলার তজুমউদ্দিন, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, ও সদর উপজেলাসহ চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় বাসাবাড়ি ও খেলার মাঠে একের পর এক বিষাক্ত এই সাপ উদ্ধারে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
জেলায় এ পর্যন্ত ছোট-বড় মিলে অন্তত ২০টি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার করেন স্থানীয়রা। এরমধ্যে বেশিরভাগ সাপকে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়।
সোনাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেহেদী হাসান মিশু ভোলা নিউজ২৪ডটকম বলেন, ‘এর আগে আমার ইউনিয়নে এই বিষধর সাপের দেখা পাইনি। পর পর দুই দিন এই সাপের সন্ধান মেলায় আমার ইউনিয়নবাসী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। আমি ও বনবিভাগের লোকজন আসার আগেই সাপটি স্থানীয়রা মেরে ফেলে।’
কবির শিকদার ভোলা নিউজ২৪ডটকম জানায়, ‘তার বসতঘরে খাটের নিচে তিনটি বিড়াল মৃত অবস্থায় দেখতে পান। পরে ঘরের লোকজন খোঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপারকে ঘর থেকে বের হতে দেখেন। তখন সবার মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে। একপর্যায়ে সাপটিকে খুঁজে পিটিয়ে মেরে ফেলে উপস্থিত লোকজন।’
ভোলা সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের নাছির মাঝি, স্থানীয় বাসিন্দা জালু মাঝি ভোলা নিউজ২৪ডটকম জানায়, তারা মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট সংলগ্ন মেঘনা পাড়ের সিসি ব্লক বাঁধে বসে জাল মেরামত করে আসছেন। হঠাৎ রোববার (২৩ জুন) বিকেলে বাঁধের পাশে একটি বিষধর সাপ দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে মৎস্য ঘাটে নিয়ে আসেন। তখন স্থানীয়রা জানান, এটি ভয়ংকর বিষধর সাপ রাসেলস ভাইপার। পরে পিটিয়ে মেরে ফেলা হয়। এ ঘটনার পর জেলেদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে বলে তারা জানান।
ইলিশা ইউনিয়নের জংশন এলাকার ব্যবসায়ী মো. নসু ও নাছির মাঝি মৎস্য ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী মো. রাশেদ বলেন, ‘শুনেছি রাসেলস ভাইপার ভয়ংকর বিষধর সাপ। এটি কাউকে কামড় দিলে মানুষ মারাও যায়। তাই আমিসহ আমরা যারা নদীর পাড়ে ব্যবসা করি, তারা খুব চিন্তিত আছি। কারণ আমরা তো নদীর পাড়ে ব্যবসা করি। রাসেলস ভাইপার আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেও ঢুকতে পারে।’
দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন মদনপুর ইউনিয়নের মেম্বার কবির শিকদার ভোলা নিউজ২৪ডটকম বলেন, ‘কয়েকদিন আগে একটি রাসেলস ভাইপার সাপ উদ্ধার হয়েছে। যে কারণে আমরা চরাঞ্চলের মানুষ খুবই দুশ্চিন্তায় আছি।’
তিনি বলেন, ‘সাপের ভ্যাকসিন (অ্যান্টিভেনম) শুধু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও সদর হাসপাতালে আছে। আমাদের এখান থেকে হাসপাতালে যেতে ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের মদনপুর ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকে ভ্যাকসিন থাকা জরুরি।’
সাপের কামড়ে প্রাণহানি এড়াতে ভোলার সব হাসপাতাল ও কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোতে অ্যান্টিভেনম রাখার দাবি জানান ভোলা শহরের বিবিএস রোড এলাকার বাসিন্দা এম হেলাল উদ্দিন ও কালিবাড়ি রোড এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা জমিস উদ্দিন।
এ বিষয়ে ভোলার উপকূলীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক ভোলা নিউজ২৪ডটকম বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রাসেলস ভাইপারের বাসস্থান জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হওয়ায় এগুলো এখন বিভিন্ন স্থানে দেখা মিলছে। ‘রাসেল ভাইপার সাপ লোকালয়ে সাধারণত খুব কমই দেখা যায়। বাচ্চা দেয়ার কারণে হয়তো ওই সাপটি লোকালয়ে চলে এসেছে। তবে সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।’
তিনি বলেন,শীত মৌসুমে এগুলো আবার তার বাসস্থানে ফিরে যাবে।
ভোলা সিভিল সার্জন ডা. কে এম শফিকুজ্জামান ভোলা নিউজ২৪ডটকম জানান,‘চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বা রাসেলস ভাইপার সাপ সবচেয়ে বিষাক্ত ও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহির্গামী বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হোন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্যু হয়।’ বর্তমানে সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে। সাপে কাটা রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আনা এবং বাড়িঘর ও আঙিনা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পরামর্শ দেন তিনি।