কলা খাওয়া নিয়ে অভ্যাস-অনভ্যাস, ভালো লাগা-মন্দ লাগা, পছন্দ-অপছন্দ এমন অনেক কথাই হয়। তবে যে যেই দলেরই হোন না কেন, পচা কলা খাওয়ার কথা বললে সবাই ছ্যা ছ্যা করবেন। কিন্তু গবেষকরা বলছেন অন্য কথা। তারা বলছেন, পচে যাওয়া কলাও খান। পাবেন বাড়তি শক্তি।
আজ ১৮ এপ্রিল। বিশ্ব কলা দিবস। এই দিবসে বিষয়টি সামনে এনে কথা বলেছেন গবেষক, পুষ্টিবিদরা। দিনে অন্তত একটি কলা খাওয়ার পরামর্শ তো দিয়েছেনই, পাশাপাশি বলেছেন কলা পচে গেলেও খেয়ে ফেলতে।
সাদা চোখে আমরা কলার চারটি রঙের সাথে পরিচিত— সবুজ, হলুদ, হলুদের ওপর কালো ফোঁটা ফোঁটা দাগ, আর কলা পচে গেলে খোসার কালচে বাদামি রঙ।
কাঁচা কলা সবুজই হওয়ার কথা। তবে এখন এক জাতের কলা পাওয়া যায়, যার বাইরেটা সবুজ হলেও ভেতরটা পাকা। তবে স্বাভাবিক নিয়মে সবুজ মানেই কলাটি কাঁচা। সেই পরিণত কাঁচা কলা দিন কয়েক রেখে দিলেই তাতে পাক ধরে। তখন তা দেখতে হলুদ হয়। এরপর কিছু দিন রেখে দিলে তার ওপর কালো-বাদামি ফোঁটা ফোঁটা দাগ পড়ে। আর তারপরও কিছু দিন ফেলে রাখুন। কলার রঙ পুরোই কালো কিংবা বাদামি হয়ে যাবে। পচনও ধরবে।
এখন বলুন তো কোন রঙের কলা আপনি খেতে পছন্দ করেন? মনে রাখবেন, এই যে চার রঙে চার ধরনের চেহারা নিয়ে আপনার ডাইনিং টেবিলে ফলের ঝুড়িতে পড়ে থাকে, ওর একেক পর্যায়ে একেক রকমের খাদ্যগুণ ধারণ করে। আর গবেষকরা বলছেন, তার কোনোটাই ফেলনা নয়।
মানুষ প্রথম তিনটি রঙের কলা নিয়ে খুব একটা আপত্তি করে না। তো আমরা শেষের রঙটি নিয়ে কথা বলি। অর্থাৎ কলা পচে গেলে কী হয়? বিশ্ব কলা দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের অধিভুক্ত ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচার ডেভেলপমেন্ট (ইফাদ) কলার কিছু গোপন মজাদার গুণের কথা জানিয়েছে।
ইফাদ বলছে, পচে যাওয়া বাদামি রঙের কলা ফেলে দেওয়া উচিত নয়। সংস্থাটির মতে, এই পর্যায়ে কলায় ট্রিপটোফ্যান নামের এক ধরনের খাদ্যগুণ তৈরি হয়, যা আপনার উদ্বেগ ও হতাশা দূর করে শারীরিক ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও এই বাদামি রঙের কলায় বাড়তি পুষ্টিগুণ যোগ হয়। ইফাদ বলছে, স্বাভাবিকভাবে খেতে গিয়ে বিস্বাদ লাগলে ওই কলা দিয়ে ব্যানানা ব্রেড বা মিল্কশেক বানিয়ে খেয়ে ফেলুন।
এখন আসুন অন্য রঙের কলার সম্পর্কে কিছু কথা জেনে রাখি। আপনি যদি সবুজ রঙের কলা খান, যে কলা এখনো পাকেনি, তাহলে আপনার শরীরে শর্করার স্তর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ইফাদ বলছে, কাঁচা সবুজ রঙের কলায় গ্লিসেমিক ইনডেক্স অত্যন্ত কম থাকে। তার মানে হচ্ছে এগুলো অতি ধীরে হজম হয়, আর তা যতক্ষণ পেটে থাকে আপনার শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়তেই দেয় না।
এদিকে হলুদ হয়ে যাওয়া পাকা কলা খেতেই ভালোবাসে বেশিরভাগ মানুষ। আপনিও সেই দলের হলে আপনি কলা খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে পর্যাপ্ত মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাবেন, যা আপনার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াবে। এই পর্যায়ে কলা খুব দ্রুত হজম হয়। তাই যখন তখন একটি কলা আপনি খেতেই পারেন।
কলার গায়ে বাদামি ফুসকুড়ি পড়ে গেলে তাতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আসলে এই পর্যায়ে এলে কলা সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু লাগে। তবে কলার সবচেয়ে সেরা স্বাস্থ্যগুণের সময়টি ততক্ষণে পার হয়ে যায়।
তাহলে তো জানা হয়েই গেল। এরপর বাজারে গেলে কলা যখন কিনবেন, কোন ধরনের পুষ্টিগুণ আপনার প্রয়োজন, তা জেনে বুঝে কলার ধরণ দেখে কিনতে পারবেন। আর এমনও হতেই পারে, কাঁদি ধরে কিনুন। সবুজ, হলুদ, ফুসকুঁড়ি পড়া হলুদ কিংবা বাদামি— সব ধরনের কলাই খেতে পারবেন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে।
কলা দিবস শুভ হোক!