ভোলা নিউজ২৪ডটকম।। দেশে ধর্ম নিয়ে কেউ যেন বাড়াবাড়ি না করে সেই আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ, এখানে সবাই স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন করবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মঙ্গলবার (১৯ অক্টোবর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ছোট ভাই শেখ রাসেলে ৫৮তম জন্মদিন উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে এ সভায় সভাপতিত্ব করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এতো রক্তক্ষয়, এতো ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে গেছে আর যেন এমন ঘটনা না ঘটে।বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ, এখানে সব ধর্মের মানুষ তার ধর্ম পালন করবে স্বাধীনভাবে। আমাদের সংবিধানেও সেই নির্দেশনা দেওয়া আছে।
আমাদের ইসলাম ধর্মও সেই কথাই বলেছে। নবী করিমও (সা.) বলেছেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করো না। কাজেই সেই বাড়াবাড়ি যেন কেউ না করে সেটাও আমরা চাই এবং এদেশে সব মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আমি জানি, আমাদের ভৌগলিক সীমারেখায় ছোট দেশ হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে অনেক বড়। কিন্তু সেই দেশেই আমি চাই প্রত্যেকটা মানুষের জীবন যেন সুন্দর হয়, উন্নত হয়। প্রত্যেকটা মানুষ যেন তার অন্ন, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবন পায় যেটা জাতির পিতার স্বপ্ন ছিলো, তা যেন আমরা পূরণ করতে পারি, সেটাই আমার লক্ষ্য।
শিশুর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, শিশু অধিকার আইন তো জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে করে দিয়ে গেছেন। প্রাথমিক শিক্ষাটাকে অবৈতনিক, বাধ্যতামূলক করে দিয়ে গেছেন। আমার বাবার আদর্শ নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি যেন এদেশে শিশুরা যেনো এই নির্মমতার শিকার আর না হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো এখনও আমরা দেখছি সেই নির্মমতা, এখনও মাঝে মধ্যে দেখি এবং পরবর্তীতেও আমরা দেখেছি, এটা যেনো আর না হয়। আমরা দেখেছি আগুন দিয়ে কিভাবে পুড়িয়ে হত্যা করা হচ্ছে, কিভাবে জ্যান্ত মানুষগুলোকে, শিশুকে পর্যন্ত। এই খালেদা জিয়া বিরোধী দলের থাকতে অগ্নিসন্ত্রাস করে চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়েছে। বাপ দেখেছে চোখের সামনে সন্তান আগুনে পুড়ে মারা যাচ্ছে। সেই রকম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড এই বাংলাদেশে ঘটেছে, এটাই হচ্ছে দুর্ভাগ্য বাংলাদেশের। আমি এটাই চাইবো, এখানে মানবতার প্রশ্ন যারা তোলে তারা যেনো এই ঘটনাগুলো ভালোভাবে দেখে যে বাংলাদেশে কী ঘটতো। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর থেকে আমাদের প্রচেষ্টা যে কোনো শিশু রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে থাকবে না, তাদের জন্য একটা ঠিকানা থাকবে। তারা যেনো একটু ভালোভাবে বসবাস করতে পারে। আমাদের একটাই লক্ষ্য, একটা শিশু তার যে জ্ঞান, মেধা সেটা যেনো বিকশিত হতে পারে, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে সেই চেষ্টাই আমি করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমার বাবা-মা, ভাইসহ পরিবারে সবাইকে হত্যা করা হলো। তারপর আইন করা হলো এই হত্যাকাণ্ডের যেন বিচার না হয়। আজ যারা মানবাধিকার নিয়ে কথা বলেন তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আমার মা-বাবাকে হত্যা করা হলো, তার বিচার কী আমি পাবো না? বিএনপির নেতারা বলেন, জিয়ার সময় সামরিক বাহিনীতে ডিসিপ্লিন ছিলো। জিয়ার সময় সামরিক বাহিনীতে ১৯টি ক্যু হয়েছে, তাহলে ডিসিপ্লিন থাকলো কীভাবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করি। এরপর আমরা ক্ষমতায় আসতে পারলাম না। তখনও বিচার চলছে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে আসামিদের চাকরি ফিরিয়ে দেয়। খালেদা জিয়ার এত পক্ষপাতিত্ব কেন, এর থেকে কি বোঝা যায়। বাবা-মা, ভাই সবাইকে হত্যা করার পর তাদের লাশ দেখিয়ে শিশু রাসেলকে হত্যা করা হয়।
এ সময় শেখ হাসিনা আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, আজকে রাসেল নেই কিন্তু, এদেশের হাজার হাজার শিশু তাদের জীবনের নিরাপত্তা তাদের জীবনের সব চাহিদা যেন পূরণ হয়। তারা যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, মানুষের মতো মানুষ হতে পারে, দেশ প্রেমে যাতে উদ্ভুদ্ধ হয় সেটাই আমরা করে যেতে চাই। তাই কবি সুকান্তের ভাষায় আমি বলে যেতে চাই এই বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাবো, আমি নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গিকার। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য এ কথাগুলো বলেছিলেন, আমি তারই ভাষায় বলে যেতে চাই-এটাই আমার লক্ষ্য। এ বিশ্বকে পারবো কিনা জানি না কিন্তু, আমার দেশের মানুষের জন্য আমি একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে যেতে চাই। আর যে রাসেলের মতো কাউকে জীবন হারাতে না হয়। একটা শিশু তার যে আকাঙ্ক্ষা তা পূরণ হলো না। অচিরেই তাকে জীবন দিতে হলো, রক্ত দিতে হলো। এ ঘটনা যেন আর বাংলাদেশে না ঘটে সেটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা, সেটাই আমরা চাই।
সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মহিলা বিষয় সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, কেন্দ্রীয় সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া প্রমুখ।