দালালদের দখলে ভোলা হাসপাতাল॥ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ ॥ আহত ৬

0
1006

আদিল হোসেন তপু॥ ভোলার ২২ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য ভরসার জায়গা ভোলা সদর হাসপাতাল। স্বল্প খরচে ভালো চিকিৎসা পাওয়ার আশায় দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এখানে ছুটে আশে চিকিৎসা পাওয়ার আশায়। ডাক্তার সংকট, নার্স সংকট, বেড সংকট, ভর্তি রোগীদের বিছানা সংকটসহ নানা সমস্যায় জর্জড়িত ভোলা সদর হাসপাতাল। তার উপর নতুন করে যোগ হয়েছে দালালদের দৌড়াতœ্য। এই দালালরা ভোলা শহরের বিভিন্ন ডায়াগনেস্টিক ক্লিনিকের ছত্রছায়ায় থেকে রোগীদের বাগিয়ে নিয়ে যেতো বিভিন্ন ক্লিনিকে। এই হাসপাতালের দালাল গ্রুপের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ভোলা সদর  হাসপাতাল যেনো রনক্ষেত্রে পরিনত হয়। সোমবার (২৩ মার্চ) দুপুরে শহরের দুটি ক্লিনিকের দালালদের মধ্যে রোগী বাগিয়ে নেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষের এক পর্যায়ে হাসপাতালে বেডে ভর্তি রোগীদের সামনে দুই গ্রুপ দেশী অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষ করে। এতে রোগীদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পরে। সংঘর্ষে উভয় গ্রুপের ৬ জন আহত হয়। আহতরা হলেন রবিন, কাশেম, আলিফ, হাছান, সাকিব, সফি। পরে ঘটনা হাসপাতাল স্থলে পুলিশ এসে নিয়ন্ত্রন নেয়। এসময় পুলিশ সন্দেহ বাজান ৩জনকে আটক করে। পড়ে ছেড়ে দেয়।

জানা যায় যে, ভোলা সদর হাসপাতালে প্রতিদিন চারশ থেকে ৫শ রোগী আসে চিকিৎসা সেবা নেওয়ার জন্য। এই রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা, টেস্ট, নিজেদের প্রাইভেট ক্লিনিকে ভাগিয়ে নেওয়ার জন্য দালালদের কয়েকটি গ্রুপ অপতৎপরতা চালায় হাসপাতালে। রোগীদের কম খরচে টেস্ট এক্সরে করে দেয়ার কথা বলে দালালরা তাদের ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এ চক্রের সঙ্গে হাসপাতালের কতিপয় কর্মচারী ও নার্সের যোগসাজশ রয়েছে বলেও অভিযোগ আছে। আর এ কারণেই আইনশৃংখলা বাহিনী অভিযান চালিয়েও দমাতে পারছে না দালাল চক্রকে।

দালালদের নিয়ন্ত্রনে হাসপাতাল: ভোলা সদর হাসপাতালে কোন রোগী আসলেই স্থানীয় ক্লিেিনকর দালালরা রোগীকে ফুসলিয়ে নিয়ে যায় হাসপাতালের বাইরের ক্লিনিকে। আর এই দালাল গ্রুপের একক নিয়ন্ত্রন ছিলো এ্যাপোলোর সেন্টু অধীনে। কিন্তু বর্তমানে ইউনিটি ডায়গনেস্টিক সেন্টারের খোকন পংখি, শফি ও রিপনের নেতৃত্বে ৩০- ৩৪জন এর একটি দল কয়েকটি গ্রুপ ভাগ হয়ে প্রতিদিন ভোলা সদর হাসপাতালে হানা দিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে সাধারন রোগীদের ইউনিটি ডায়গনিস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতো সুকৌশলে। একেক গ্রুপে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ জন দালাল রয়েছেন। তাদের কেউ হাসপাতালের কোনো কর্মচারীর আত্মীয়, কেউ স্থানীয় প্রভাবশালীদের আশীর্বাদপুষ্ট। ফলে হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা এদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস পান না। আর এ সুবাদে রোগী ভাগাচ্ছে দালালরা। ওই রোগীর কাছ থেকে প্রাইভেট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ যে টাকা আয় করে তার শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমিশন তারা পায়।
পুলিশের অভিযানেও দমছেনা দালাল: ভোলা সদর হাসপাতালে প্রায় জটিকা অভিযান দিয়ে দালাল আটক করে দালালদের গ্রেফতার করে সাজাও দেয়া হয়। কিন্তু দাললালদের তৎপরতা থামে না। আইনি ফাঁক ফোকরে বেড়িয়ে  আবার বীরদর্পে তৎপরতা শুরু করে। এ হাসপাতালকে ঘিরে সক্রিয় দালালদের কেউ কেউ কয়েকবার জেল খেটেছেন।
ভোলার সিভিল সার্জন ডাঃ রতন কুমার ঢালী বলেন, হাসপাতালে বিভিন্ন ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের নিয়োগকৃত দালালদের দৌড়াত্ম বেড়ে গেছে। যার ফলে সাধারণ রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। হাসপাতালকে দালালমুক্ত করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালকে দালালমুক্ত রাখতে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।

LEAVE A REPLY