ভোলা নিউজ ২৪ ডট নেট : বাগেরহাট সদর উপজেলায় কুকুরের কামড়ে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। ফকিরহাট উপজেলায় কুকুরে কামড়ানো গরুর দুধ পান করে অসুস্থ হওয়ার আতঙ্কে এক গ্রামের প্রায় ৯০ জন বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ও মির্জাপুর গ্রামে কুকুরের কামড়ে ওই ৩০ জন আহত হন। পরে এলাকাবাসী ওই কুকুরটিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে।
বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের চাকুলি গ্রামে কুকুরে কামড়ানো গাভির দুধ পান করে আতঙ্কিত হয়ে নারী ও শিশুসহ প্রায় ৯০ জন বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের কুকুরে কামড়ানো প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ভ্যাকসিন নিলেই জলাতঙ্কের আশঙ্কা কেটে যাবে।
কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন উপজেলার কাড়াপাড়া গ্রামের আনিস হাওলাদার (১০), সুমন শেখ (১০), তাওহিদুল ইসলাম (১৩), সোভিক দে (১৪), মিরাজুন্নাহার লুসি (৩৮), ময়না বেগম (৬০), সাইদ শেখ (৩৫), আনোয়ারা বেগম (৩০), জাইমা বেগম (৬০), মো. আলী শেখ (৪৫), হালিমা বেগম (৫৫) ও সবিতা পাল (৪৫)।
চিকিৎসাধীন মো. আলী শেখ বলেন, ‘আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় পেছন থেকে আসা একটি কুকুর হঠাৎ করে আমার পেছনে কামড়ে ঝুলে থাকে। আমি চিৎকার শুরু করলে কুকুরটি আমার পেছনের মাংসে কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে ছেড়ে দিয়ে দৌড় দেয়। পরে স্বজনেরা আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করে।’
আহত সবিতা পাল বলেন, ‘আমি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় উঠতেই একটি কুকুর দৌড়ে এসে আমার ডান হাত কামড়ে ধরে। অনেক চেষ্টায় কুকুরের হাত থেকে রক্ষা পাই। হাসপাতালে এলে আমাকে প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দিয়েছে।’
কাড়াপাড়া গ্রামের বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘গত দুই দিনে কাড়াপাড়া ও মির্জাপুর গ্রামের নারী-শিশুসহ অন্তত ৩০ জনকে কামড়ায় ওই কুকুরটি। আজ বেলা ১১টার দিকে আমরা এলাকাবাসী সবাই মিলে কুকুরটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছি।’
ফকিরহাট উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফোরকান শিকারি বলেন, ‘চাকুলি গ্রামের বেল্লাল শেখের পোষা গরুর দুধ ওই গ্রামের প্রায় দশটি পরিবার নিয়মিত পান (টাকার বিনিময়ে জোগান) করে আসছে। ওই দশটি পরিবারে সদস্যসংখ্যা ১০০ জনের বেশি। কয়েক দিন আগে কুকুরে কামড়ালে গাভিটি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তারা না জেনে ওই কুকুরে কামড়ানো গাভির দুধ পান করতে থাকে। বৃহস্পতিবার কুকুরের কামড়ে ৩০ জন অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর জানাজানি হলে ওই পরিবারগুলোর সদস্যরা জলাতঙ্কের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তাঁরা বিষয়টি আমাকে জানালে আমি প্রায় ৯০ জনকে চিকিৎসার জন্য বাগেরহাট সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি।’
গরুর মালিক বেল্লাল শেখ বলেন, ‘আমার গাভির দুধ চাকলি গ্রামের দশটি পরিবারকে দিয়ে থাকি। বুধবার আমার পোষা গুরুটি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পশু চিকিৎসককে দেখাই। তিনি গরুটি দেখে কুকুরে কামড়িয়েছে বলে নিশ্চিত হন। তবে কবে কখন, কোথায় গাভিটিকে কুকুরে কামড়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
বাগেরহাট সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মন্দির রহমান বলেন, ‘কুকুরে কামড়ানো গরুর দুধ পান করে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কায় নারী-শিশুসহ প্রায় ৯০ জন হাসপাতালে আসেন। আমরা তাঁদের প্রতিষেধক ভ্যাকসিন দিয়েছি। এক মাসের মধ্যে চারটি ভ্যাকসিন নিলেই তাঁরা পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাবেন। আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওই চিকিৎসা কর্মকর্তা।’ তিনি বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার দুটি গ্রাম থেকে কুকুরে কামড়ানো নারী-শিশুসহ অন্তত ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুকুরে কামড়ানোর ক্ষত রয়েছে। তাদের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে।