করোনাভাইরাস প্রতিরোধে তুলনামূলকভাবে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে ভ্যাকসিন তৈরি করেছে অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি। এরই মধ্যে এটি পরীক্ষামূলক প্রয়োগের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছে গেছে। আজ সোমবার ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হচ্ছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি মানবদেহে প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিরাপদ বলে বোধ হচ্ছে। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে আরও পরীক্ষা–নিরীক্ষা প্রয়োজন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, প্রাথমিক ফলাফলে দেখা গেছে যে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি মানুষের দেহে প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি ও শ্বেতরক্তকণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। এর ফলে দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার কৌশল বুঝতে পারে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, গবেষণায় দেখা গেছে যে, অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিন প্রয়োগের ১৪ দিন পর মানুষের দেহে শ্বেত রক্তকণিকা বেড়ে যাওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। আর ভ্যাকসিন প্রয়োগের ২৮ দিন পর বাড়ছে অ্যান্টিবডি। তবে বেড়ে যাওয়া এই অ্যান্টিবডি ও শ্বেত রক্তকণিকা কতদিন মানুষের শরীরে টিকে থাকে-সে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। কারণ এ জন্য আরও বড় পরিসরে ভ্যাকসিনটির পরীক্ষামূলক প্রয়োগের প্রয়োজন আছে।অক্সফোর্ড রিসার্চ গ্রুপের অধ্যাপক অ্যান্ড্রু পোলার্ড বলেন, ‘আজ যে ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে, তার বিষয়ে আমরা সত্যিই সন্তুষ্ট। এই ফলাফল অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এবং আমরা মনে করছি যে, এই প্রতিক্রিয়া করোনা থেকে সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত।’
ল্যানসেটে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটির একটি ডোজ ব্যবহার করার পরই প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। বাকি ১০ শতাংশের ক্ষেত্রে ওই অ্যান্টিবডি তৈরি হতে লেগেছে দুটি ডোজ। অধ্যাপক পোলার্ড বলছেন, ‘আমরা জানি না যে, পরিপূর্ণ সুরক্ষার জন্য অ্যান্টিবডির ঠিক কী পরিমাণ প্রয়োজন। তবে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মাধ্যমে অ্যান্টিবডির ওই পর্যায় সর্বোচ্চে নিয়ে যাওয়া যায়।’
গবেষকেরা বলছেন, প্রাথমিক ফলাফলের ভিত্তিতে এটি বলা যায় যে, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনটি নিরাপদ। তবে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। অবশ্য সেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিপদজনক পর্যায়ের নয়। পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হয়েছে এমন মানুষদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ৭০ শতাংশের পরবর্তীতে জ্বর বা মাথাব্যথা অনুভূত হয়েছে। সাধারণ প্যারাসিটামল দিয়েই এসব পাশ্বপ্রতিক্রিয়া সামাল দেওয়া গেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাথমিকভাবে সম্ভাবনাময় মনে হলেও এই ভ্যাকসিনটি সর্বসাধারণের জন্য সরবরাহ করার আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন আছে। ভ্যাকসিনটি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়া প্রতিরোধ করে বা এই রোগের উপসর্গ হ্রাস করে-প্রাথমিক ফলাফলে এমনটা পুরোপুরি প্রমাণিত হয়নি।
পরীক্ষামূলক প্রয়োগের দ্বিতীয় পর্যায়ে যুক্তরাজ্যে ১০ হাজার মানুষের দেহে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ হাজার, দক্ষিণ আফ্রিকায় ২ হাজার ও ব্রাজিলে ৫ হাজার মানুষের ওপর এই ভ্যাকসিনের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হবে। এর পর ‘চ্যালেঞ্জ ট্রায়াল’ বলেও একটি ধাপ আছে। ওই ধাপে ভ্যাকসিন নেওয়া কিছু ব্যক্তিকে ইচ্ছে করেই নতুন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত করা হবে। তবে সেক্ষেত্রে নৈতিক কিছু বিধিনিষেধ আছে।
মূলত এতসব ধাপ পার হওয়ার পরই বাজারে আসার অনুমতি পাবে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন। আশা করা হচ্ছে, চলতি বছরের শেষ দিকে এই ভ্যাকসিন সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকর্মীরা অগ্রাধিকার পাবে। এরপর ধীরে ধীরে তা বিশ্বব্যাপী সহজলভ্য হবে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, খুব সম্ভবত আগামী বছরের শুরুতেই এই ভ্যাকসিন বিশ্বজুড়ে পাওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে একটি শর্তও আছে। তা হলো-যদি সব প্রক্রিয়া ঠিকঠাক সম্পন্ন হয় তবেই এটি সম্ভব হবে।