ভোলা নিউজ ২৪ ডটকম ।। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে ওবায়দুল কাদেরকে ঢাকার সিটি নির্বাচনে প্রচারে অংশ নেওয়ার চ্যালেঞ্জ দিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার চলার মধ্যে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে এক সমাবেশে একথা বলেন ফখরুল।
স্থানীয় নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি নিয়ে আপত্তি তুলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, বিএনপি মহাসচিব ভোটের প্রচার চালাতে পারলে তিনি কেন পারবেন না?
ফখরুল বলেন, “একশ বার পারবেন। এই মুহূর্তে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন, আসেন এক সাথে নির্বাচন করি। তাহলেই পারবেন। আইন তো তাই বলে। আইন বলে যে, আপনি মন্ত্রী এবং এমপি থাকলে আপনি এটা পারবেন না।”
নির্বাচনে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আজকে ক্ষমতা থেকে নেমে আসুন লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করুন। একটা নিরপেক্ষ সরকার বসিয়ে দেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন করুক।
“সেই নির্বাচনে যদি আপনারা জেতেন, মাথা পেতে নেবে। কিন্তু আপনারা জানেন, সেটা কোনোদিন হবে না। সেজন্য কৌশল করে বিভিন্নভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করছেন। এটা কখনোই জনগণ মেনে নেবে না।”
তারপরও নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “নির্বাচন-নির্বাচন খেলা করছেন, আমরা জানি। তারপরেও আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি। (বিডি নিউজ)
“কেন যাচ্ছি খুব পরিষ্কার করে বলেছি- আমাদের গণতন্ত্রের মুক্তি ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সংগ্রামের আন্দোলনের একটা হাতিয়ার হিসেবে আমরা নির্বাচনে যাচ্ছি।”
খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “তিনি বলেছেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এমন কোনো অসুস্থ নন যে তাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে পাঠাতে হবে। এই ধরনের কথা আপনার কাছ থেকে আশা করি না।
“আমরা আশা করি, সত্যিকার অর্থে একজন রাজনৈতিক নেত্রী বাংলাদেশের মানুষ যাকে ভালোবাসে তার চিকিৎসার জন্য আপনারা সঠিক কথা বলুন। এখন আপনাদের কোর্টে বল, এখন আর আদালতে কোর্টে বল নেই। বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের যে কোনো অবনতির দায়-দায়িত্ব সব আপনাদের। যদি বেগম খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হয়, তাহলে সম্পূর্ণভাবে আপনাদেরকেই দায়ী থাকতে হবে।”
খালেদা জিয়া জামিন না হওয়ার বিষয়ে ফখরুল বলেন, “যে মামলায় যে কোনো মানুষ জামিন পায়। আজকে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা জামিন পায়, মহীউদ্দীন খান আলমগীর জামিন পায়, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জামিন পায়, তাহলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কেন জামিন পাবেন না?
“কারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাইরে থাকলে আপনাদের ওই তখতে তাউস, আপনাদের মসনদ জনগণ ভেঙে ফেলবে। এই কারণে আপনারা তাকে আটকিয়ে রেখেছেন।”
সরকারকে হুঁশিয়ার করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এভাবে দখল করে, জোর করে, নির্যাতন করে, গুলি করে, গুম করে চিরদিন ক্ষমতায় টিকে থাকা যায় না। শেখ মুজিবুর রহমানের কথা আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’। বাংলার মানুষকে দাবায়ে রাখা যাবে না।”
ওয়ান-ইলেভেনের দিনটি স্মরণ করে ফখরুল বলেন, “আমি সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের নেতাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, তারা যে দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে কলঙ্কময় দিন বলে লেখা আছে, সেই দিনে যে জনপ্রিয় নেত্রীকে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে আটক করে রাখা হয়েছে, তার মুক্তির জন্য এই সমাবেশের আয়োজন করেছে।”
কালক্ষেপণ না করে বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, “তার শরীরটার অত্যন্ত খারাপ হয়ে গেছে। ডাক্তার সাহেবরা বলেছেন, তার উচ্চতর সেন্টারে চিকিৎসা দরকার। বাংলাদেশে এমন কোনো সেন্টার নেই। সেজন্য তার পরিবারের সদস্যরা বলছেন যে, আমরা তার চিকিৎসা করতে চাই।”
পেশাজীবী পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ বলেন, “ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা অনুযায়ী সরকার নিজেই পারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করার জন্য।
“বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্যারোলে মুক্তি পেয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন এবং এখনও তিনি প্যারোলে, তার প্যারোলোর আদেশ কিন্তু বাতিল হয় নাই। প্যারোল থেকেই কিন্তু তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন।”
শওকত মাহমুদ বলেন, “যদি শিগগিরই এই ৪০১ ধারা অনুযায়ী দেশনেত্রীকে মুক্তি করা না হয়, এখন তো মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা চলছে, আমরা এই সরকারের বিদায়ের ক্ষণগণনা শুরু করব।”
ফখরুল বলেন, “আজকে সরকার উৎসব পালন করছেন, খুব ভালো কথা। কিন্তু গণতন্ত্রের নেত্রীকে কারাগারে রেখে উৎসব পালন করছেন, এই উৎসবে দেশের মানুষের হৃদয় কতটুকু থাকবে সেই কথাটা একটু চিন্তা করে দেখা দরকার আপনাদের।”
পেশাজীবী পরিষদের সদস্য সচিব এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় সমাবেশে সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, সাংবাদিক এম আবদুল্লাহ, কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওবায়দুল ইসলাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, ড্যাবের অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, রফিকুল ইসলাম বাচ্চু, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাকির হোসেন, কৃষিবিদ হারুনুর রশীদ, শামীমুর রহমান শামীম, জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম বক্তব্য রাখেন।