ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট : আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটি (আইসিআরসি) আয়োজিত শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ক্রিকেট টুর্নামেন্টের একটি দৃশ্য। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠে l হাসান রাজাম্যাচের নবম ওভার। শর্ট পিচড বলটিকে ব্যাটসম্যান তুলে মারলেন বোলার ও আম্পায়ারের মাথার ওপর দিয়ে। সীমানাদড়ির একটু সামনে পড়ে হলো ৪ রান। শামিয়ানা দিয়ে বানানো অস্থায়ী প্যাভিলিয়নে হালকা করতালি দিলেন সতীর্থরা। ওভারের শেষ বলটিও একই রকম। এবার ডাউন দ্য উইকেটে এসে বলটিকে হাওয়ায় ভাসালেন ব্যাটসম্যান। সঙ্গে সঙ্গেই প্যাভিলিয়ন থেকে সতীর্থদের চিৎকার মাশরাফি…মাশরাফি…। আওয়াজ উঠল ফিল্ডিং করা দলের প্যাভিলিয়ন থেকেও, ‘ব্যাপার না সাকিব, গুড বোলিং! পরেরবার আউট হবে।’
নাহ্। মাশরাফি-সাকিবদের খেলা কোনো ম্যাচ নয় এটি। আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটির (আইসিআরসি) আয়োজনে গতকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল মাঠে শুরু হয়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের ২০ ওভারের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট। সেখানেই নিজেদের মাশরাফি-সাকিব ভেবে খেলছেন কয়েকজন।
যে ব্যাটসম্যানকে সতীর্থরা মাশরাফি বলে ডাকছিলেন তাঁর আসল নাম মজনু মিয়া। খেলছেন দুরন্ত লালমনিরহাট ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টিমে। মাশরাফিকে আদর্শ মেনে মিডিয়াম পেস বোলিংয়ের পাশাপাশি ঝোড়ো ব্যাটিং করতে পারেন বলেই সতীর্থদের কাছে মজনু মিয়া হয়ে যান ‘মাশরাফি’। ২৫ রানে আউট হওয়ার পর কথা হয় মজনুর সঙ্গে। বলেন, ‘মাশরাফি ভাইকে দেখেই ক্রিকেটে এসেছি। উনি কষ্ট করে খেলেন। অন্যরা যেখানে চোটে পড়লে খেলা ছেড়ে দেয়, সেখানে তিনি সাত-আটবার চোটে পড়েও খেলছেন। আমার মনে হয়, তিনি পারলে আমিও পারব।’
মজনু মিয়ার দুই হাতের কবজি স্বাভাবিকের চেয়ে চিকন। এক পা বাঁকা। খুঁড়িয়ে হাঁটতে হয়। খেলার পাশাপাশি গাজীপুরের একটি সাইকেল-রিকশা-ভ্যান মেরামতের দোকানে কাজ করেন। মজনু বলেন, ‘মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে এখনো সরাসরি দেখা হয়নি। সবার দোয়ায় জাতীয় দলে সুযোগ পেলে ওনার মতো আমিও দেশের জন্য ভালো কিছু করব।’
টুর্নামেন্টে গাজীপুর গ্লোরিয়াস ডিসেবল ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে খেলছেন রাসেল ইসলাম। মাঠের এক পাশে তাঁকে দেখা গেল খেলা দেখতে আসা জাতীয় দলের সাবেক ক্রিকেটার জাভেদ ওমরের সঙ্গে সেলফি তুলতে। জন্মের পর বাঁ হাতের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটেনি রাসেলের। এক হাত দিয়েই ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি ফাস্ট বোলিং করেন। রাসেলের স্বপ্ন, একদিন এই হাত দিয়েই বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জয় এনে দেবেন তিনি।
টুর্নামেন্টের ছয়টি দলে খেলছেন প্রায় এক শ খেলোয়াড়। আয়োজক আইসিআরসির ফিজিক্যাল রিহ্যাবিলিটাইজেশন প্রোগ্রাম ম্যানেজার অজয় সেন জানান, বিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেই এই টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়েছে। এখান থেকে সেরা ২০ জনকে নির্বাচন করে পরে তাঁদের বিকেএসপির প্রধান কোচের অধীন প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
গতকাল থেকে শুরু হওয়া চার দিনব্যাপী টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে মুখোমুখি হয় দুরন্ত লালমনিরহাট ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টিম এবং ঢাকা ও আরদ্রিদ ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টিম। বাকি দলগুলো হলো বাংলাদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড, সিআরপি ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টিম, ড্রিম ফর ডিসঅ্যাবিলিটি ফাউন্ডেশন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ক্রিকেট টিম ও গাজীপুর গ্লোরিয়াস ডিসেবল ক্রিকেট ক্লাব। দলগুলো গড়েছে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করা ছয়টি সংগঠন। টুর্নামেন্টে প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি লালমনিরহাটের দল দুরন্ত লালমনিরহাট। দলটির ম্যানেজার প্রফুল্ল চন্দ্র রায় জানান, ২০১৫ সালে দেশে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের একটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হয়। এরপর থেকেই লালমনিরহাটের প্রতিবন্ধী কল্যাণ সমিতি (পিকেএস) এলাকার বিভিন্ন জায়গায় প্রতিভা খুঁজে বের করে এই দল গড়ে। মূলত দৃশ্যমান শারীরিক অক্ষমতা থাকলেও যাঁরা কাজ চালিয়ে নিতে পারেন তাঁদেরই নির্বাচিত করা হয়।