গত বছরের বিপর্যয়ের প্রভাব ভোলায় তরমুজের আবাদ কমেছে তিন-চতুর্থাংশ

0
461

এইচ এম জাকির, ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট ॥ গত বছর অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে ক্ষতির মুখে পড়ায় এ বছর ভোলায় তরমুজ আবাদে ধস নেমেছে। লক্ষ্যমাত্রার এক-চতুর্থাংশ পূরণ হয়েছে মাত্র। ফলে আগের মৌসুম গুলোতে জেলায় পাঁচ-ছয় লাখ টন তরমুজ উৎপাদন হলেও এ বছর দেড় লাখ টনের বেশি হবে না বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় তরমুজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর। হেক্টরপ্রতি ৫০ টন হিসাবে মোট উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয় ৬ লাখ ২৫ হাজার টন। কিন্তু চাষ হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১২৪ হেক্টর। সে হিসাবে উৎপাদন দাঁড়াবে ১ লাখ ৫৬ হাজার ২০০ টন।


গত বছর ভোলায় তরমুজ আবাদ হয়েছিল লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন ধরা হয়েছিল ৬ লাখ ২৫ হাজার টন। কিন্তু ফসল তোলার আগমুহূর্তে অতিবৃষ্টির কারণে অধিকাংশ চাষীর তরমুজক্ষেত পানিতে তলিয়ে যায়। এতে উৎপাদন কমে যায় প্রায় দুই লাখ টন। ক্ষতিগ্রস্ত হন বহু কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয় তালুকদার বলেন, গত বছর ক্ষেতে বাম্পার ফলন দেখা গেলেও ফসল ঘরে তোলার সময় আকস্মিক বৃষ্টিতে অধিকাংশ চাষীর তরমুজক্ষেত পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সে লোকসান পুষিয়ে নিতে চলতি মৌসুমেও চাষীরা তরমুজের আবাদ শুরু করেন। কিন্তু গাছ বড় হতেই গত ৭-১০ ডিসেম্বর টানা বৃষ্টিতে বিভিন্ন ফসলের পাশাপাশি পানিতে ডুবে পচে গেছে তরমুজ গাছও। এরপর আবার জমি তৈরি করে আবাদ করলে ফলন আসতে বর্ষা এসে যাবে, এমন আশঙ্কায় অনেকেই তরমুজ আবাদ থেকে সরে আসেন। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র এক-চতুর্থাংশ আবাদ হয়েছে।
সম্প্রতি কয়েকটি উপজেলার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, জেলায় তরমুজের মোট উৎপাদনের সিংহভাগ চরফ্যাশন উপজেলা থেকে আসে। কিন্তু এখন সেখানে দেখা যাচ্ছে বোরো ধান। উপজেলার ২১টি ইউনিয়নের মধ্যে নুরাবাদ, মজিবনগর, চরকলমী, আহম্মদপুর, নীলকমল, আবুবক্করপুর, রসুলপুরসহ আটটি ইউনিয়নে তরমুজের আবাদ বেশি হয়ে থাকে। বর্তমানে সব ইউনিয়নের অধিকাংশ জমিতেই ধান। কৃষকরা জানান, পরপর লোকসান দেয়ায় এ অ লের অধিকাংশ তরমুজচাষী এখন তরমুজের পরিবর্তে ধানের আবাদ করছেন।
নুরাবাদ ইউনিয়নের তরমুজচাষী কুরবান আলী বলেন, ২০১৬ সালে তরমুজের ভালো ফলনের পাশাপাশি প্রায় আড়াই লাখ টাকা মুনাফা করেন। গত বছরও তরমুজের ভালো ফলন হয়েছিল। কিন্তু শেষের দিকে টানা বৃষ্টিতে সমস্ত ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ তরমুজ জমিতেই পচে গেছে। তাই এ বছর আর ঝুঁকি নেননি। তরমুজ চাষ কম হওয়ার একই কারণ ব্যাখ্যা করেন আবদুল্যাপুরের আজিজুল ইসলাম, আলাউদ্দিনসহ আরো অনেকে।
তবে ব্যতিক্রম দুয়েকজন কৃষদের মধ্যে রসুলপুর ইউনিয়নের মোশারেফ বলেন, অসময়ে অতিবৃষ্টির কারণে প্রায় ২০ হাজার টাকা লোকসান হলেও একই জমিতে আবার তরমুজ চাষ করেছেন তিনি। সব ঠিকঠাক থাকলেও ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক প্রশান্ত কুমার সাহা বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে তরমুজ আবাদে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তবে চাষীরা বসে নেই। সেসব জমিতে বোরো ও মুগ চাষ বাড়ছে। এতে তরমুজের লোকসান কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবেন তারা।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে অসময়ে অতিবৃষ্টি, জমিতে পলির বদলে বালিমাটি জমা, নদীর পানিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি ও সেসঙ্গে ঋতু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন ফসলে বিরূপ প্রভাব পড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

LEAVE A REPLY