ইউরোপজুড়ে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সেখানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হেনেছে। অনেক দেশ কঠোর লকডাউনে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে জার্মানি আর ফ্রান্সের নামও। গতকাল বুধবার করোনার সংক্রমণ রোধে জার্মানি পানশালা ও রেস্তোরাঁ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। ফ্রান্স জনগণের চলাচল সীমিত করতে কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দিয়েছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতকাল বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল রাজ্যপ্রধানদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলনে যুক্ত হন। তিনি জার্মানিতে আংশিক লকডাউনে সম্মত হন। আগামী ২ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশটিতে পানশালা ও রেস্তোরাঁ বন্ধ থাকবে। তবে দোকানগুলো সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার শর্তে খোলা রাখা যাবে।
জার্মানির এক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, লকডাউনের সময়ে দেশটির সিনেমা, থিয়েটার, কনসার্ট হল, খেলাধুলার স্থান, বাণিজ্য মেলার মতো আয়োজনও বন্ধ থাকবে।
ফ্রান্সে এখন দিনে ৫০ হাজারের বেশি সংক্রমণ শনাক্তের সংখ্যা পেরিয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ আরও কঠোর নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেবেন বলে মনে করছেন দেশটির কর্মকর্তারা। এর আগে গত সপ্তাহে ফ্রান্স কারফিউ জারি করে জনগণের চলাচল সীমিত করেছে। এবারে ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে দেশটি। দেশটিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে লকডাউন চলতে পারে। আজ বৃহস্পতিবার রাত থেকে এ লকডাউন শুরু হতে পারে। অবশ্য দেশটির প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে এখনো এ বিষয়ে নির্দেশ আসেনি।
ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেনের দেখানো পথে হাঁটছে জার্মানি ও ফ্রান্স। দুটি দেশে স্কুল বন্ধের পাশাপাশি অধিকাংশ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে গত মার্চ ও এপ্রিলে যে পরিপূর্ণ লকডাউন দেওয়া হয়েছিল, এবার ততটা কঠোর লকডাউন দেওয়া হচ্ছে না।
লকডাউন দেওয়ার ফলে অর্থনীতির ওপর আরও ভারী প্রভাব পড়তে পারে। অর্থনৈতিক দুর্দশা কাটাতে জার্মানির অর্থমন্ত্রী ওলাফ স্কলজ এক হাজার কোটি ইউরো সাহায্যের ঘোষণা দিয়েছেন।
ইউরোপের নেতারা লকডাউনে সৃষ্ট পরিস্থিতি কাটাতে মরিয়া হলেও স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, পোল্যান্ড, বুলগেরিয়াতে মহামারির বিস্তার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে।
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেনস স্পান বলেছেন, ‘আমরা যদি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ) ভর্তি হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করি তবে তা অনেক দেরি হয়ে যাবে।’ ইতিমধ্যে নেদারল্যান্ডসের আইসিইউ করোনা রোগীতে পূর্ণ হওয়ায় সেখান থেকে জার্মানিতে রোগী আসতে শুরু করেছে। রাশিয়ার ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী তাতিয়ানা গোলিকোভা বলেছেন, তাঁর দেশে আইসিইউ ৯০ শতাংশ ভরে গেছে। ফ্রান্স ও সুইজারল্যান্ডের মতো উন্নত দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাও ধাক্কা খেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
যুক্তরাজ্যের টাস্কফোর্সের পক্ষ থেকে করোনার টিকা সবার জন্য সমান কার্যকর হবে না বলে মন্তব্য করার পর উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
ইউরোপের দেশগুলোর সরকারকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি যৌথ কৌশল প্রণয়নের ওপর গুরুত্ব দিতে আহ্বান জানানো হয়েছে।
ইউরোপিয়ান কমিশনের চেয়ারম্যান উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর। তবে আমরা প্রত্যেকে যদি দায়দায়িত্ব গ্রহণ করি তবে ভাইরাসের বিস্তার কমিয়ে আনতে পারি।’