ভোলায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চলছে পলিথিন ব্যাবসা-বিপন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশ

0
10

মাহমুদুল হাসান ফাহাদ,ভোলা নিউজ২৪ডটকম ।।মাটি ঘুঁড়লেই উঠে আসে শত শত পলিথিন ব্যাগ।দেশব্যাপী পরিবেশে ব্যবহার-নিষিদ্ধ পলিথিনের এই ভয়াল থাবায় ভোলার প্রাকৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হয়ে উঠেছে। নিষিদ্ধ পলিব্যাগের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা। সরকার ২০০১ সালে ৫৫ মাইক্রোনের নিচে পাতলা পলিথিন উত্পাদন এবং এর ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছিল। তবে আইনের ও শর্তের ফাঁক-ফোকরে এই ধরনের পরিবেশ বিধ্বংসী পলিথিনের উত্পাদন ও ব্যবহার বন্ধ তো হয়ইনি, বরং আগের চেয়ে ব্যাপক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতির জন্য জনসাধারণের অসচেতনতাকে পুরোমাত্রায় দায়ী করলেন বিভিন্ন পরিবেশবিদ। তারা বলছেন, শুধু ভোলা শহরে প্রতিদিন বিভিন্ন গ্রাম গঞ্জের হাটবাজারসহ দৈনন্দিন কাজে প্রায় লাখ লাখ টাকার নিষিদ্ধ পলিব্যাগ ব্যবহূত হচ্ছে। আর এই সব পলিব্যাগ প্রতিদিন নিক্ষিপ্ত হচ্ছে ভোলার নদী-নালা- খাল-বিল জলাশয়,-পৌর ড্রেনেজ,বসতির বাড়ি বনভূমি এবং মেঘনা নদীর মোহনায়। নিষিদ্ধ পলিব্যাগের জঞ্জাল থেকে ভোলাকে ও জেলার পরিবেশকে বাঁচাতে কর্তৃপক্ষ বা পৌর কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রশাসন অত্যন্ত দুর্বল পর্যায়ে রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, এই পলির জঞ্জাল থেকে ভোলার মাটি ও ফসলিজমির উর্বরতা দিন দিন কমছে।

তথ্যসূত্র জানা যায় এইসকল নিশিদ্ধ পলিথিন ভোলা সহ বিভিন্ন উপজেলার পাচার করে যাচ্ছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। যারা অবৈধ পন্থায় প্রশাসনের আড়ালে ভোলা শহর সহ বিভিন্ন হাটবাজার গ্রামগঞ্জে এসব নিষিদ্ধ পলিথিন পাচার করে থাকেন। গোপনসূএে জানা যায় প্রশাসনের চোখ ফাকি দিয়ে কখনো লঞ্চযোগে কখনো বা পণ্যবাহী গাড়িতে ঢাকা থেকে ভোলায় আনা হয় এসকল নিষিদ্ধ পলিথিন।যার সাথে যুক্ত রয়েছেন ভোলার অসংখ্য বড় বড় মুদি ব্যবসায়ী,ফল বিক্রেতা, কনফেকশনারি, সহ কাচা মালামাল ব্যাবসায়ীরা। যারা ঢাকা থেকে তাদের আমদানি করা মুদির মালামাল ফলমুলের ট্রে- কিংবা ঝুড়িতে করে সরাসরি ঢাকা থেকে ভোলায় নিয়ে আসেন বলে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে সেই তথ্য।

ভোলার নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ীদের অন্যতম দুই নাম নতুন বাজার ফল ব্যাবসায়ী মো. নাসির এবং পরানগঞ্জ বাজারের ফরহাদ হোসেন, শহরের কসাইপট্রির মুদি ব্যবসায়ী দিনার নাম অন্যতম বলে জানা যায়।এবং এদের কাছ থেকে ভোলার বিভিন্ন হাটবাজার গ্রামগঞ্জে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে খুচরা ও পাইকারি সেল করে থাকেন।আর তাদের সহায়ক হিসেবে যারা তারা হলেন পরানগঞ্জের তরিকুল, নুরে-আলম সহ নতুন বাজারের ফাস্টফুড ব্যাবসায়ী বিল্লাল হোসেন সহ মাছ বাজারের চৌধুরী প্রমুখ। যদিও প্রশাসনের নজরদারিতে গত কয়েক মাস আগে পলিথিন সহ জব্দকরে বিল্লাল হোসেনকে জরিমানাসহ ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।তবে তারপরও অতি লাভের আশায় চালিয়ে তারা চালিয়ে যাচ্ছেন পরিবেশ দূষণ করা ও সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যাবসা। আর যেখানে খুচরা পাচারকারীরা অনেকে সতর্কতায় থাকলেও পলিথিন ব্যাবসার ডিলার বা মুলহোতারা অনেকেই রয়ে গেলেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাবসা জড়িত অভিযোগের ভিত্তিতে জেলার এসকল ব্যাবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা অনেকেই পূর্বেকার জড়িত থাকার কথাটি স্বীকার করলেও কেউবা আবার তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার এর ফলে ভোলার পরিবেশ দূষণ, ফসলি জমি,বিভিন্ন মৎস চাষ পুকুর,মাছের ঘের সহ মেঘনা নদী নালার মাছ ও জীববৈচিত্র্যের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার যে কথা বিশেষজ্ঞরা বলছেন তার পেছনেও সিংহভাগ দায়ী এই হচ্ছে এই পলিথিন। একই বিপর্যয়ের আশংকা করা হচ্ছে বঙ্গোপসাগরেও।

তাই পরিবেশ বিদ সহ সাধারণ মানুষের দাবি এবিষয়ে জেলা যথাযথ কর্তৃপক্ষের জরুরি নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন। এছাড়াও নিষিদ্ধ এই পলিথিন ব্যাবসার সাথে যারা জড়িতদের তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে জেলার প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করার তাগিদ তাদের। এবং এদের আইনের আওতায় আনলেই হয়তো ভোলার পরিবেশ রক্ষায় যথার্থ ভুমিকা পালন করবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও পরিবেশবিদগন।

LEAVE A REPLY