‘ডিজনিল্যান্ড’ থেকে ‘আইফেল টাওয়ার’, কী নেই বাবার ডেরায়!

0
567

ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট : দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের দায়ে ভারতের কথিত ধর্মগুরু গুরমিত রাম রহিম সিংকে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন সিবিআই আদালত। বিতর্কিত এই ধর্মগুরু তাঁর হরিয়ানায় সিরসার ডেরায় মধ্যযুগীয় রাজাদের মতো জীবন যাপন করতেন। তাঁর কক্ষ সব সময় নারীদের (সাধ্বী) দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকত। সাধ্বীদের নিয়মিত যৌন নির্যাতন করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, ডেরার ভেতর ব্যক্তিগত ডিজনিল্যান্ড নির্মাণ করেছিলেন রাম রহিম। এই ডিজনিল্যান্ডের ভেতর আইফেল টাওয়ার, ক্রুজ জাহাজ ও তাজমহলসহ বিখ্যাত ভবনের আদলে রিসোর্ট তৈরি করেছিলেন তিনি। ডেরার ভেতর মোট ১৫টি রিসোর্ট রয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, হরিয়ানার সিরসায় ডেরার প্রধান কার্যালয়ের ভেতরে বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর একটি ভিডিওচিত্র প্রকাশ পেয়েছে। ইতিমধ্যে ওই ভিডিওচিত্র ভাইরাল হয়ে গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রাম রহিমের বানানো সিনেমা ‘এমএসজি’র শুটিংও হয়েছিল ডেরার ভেতরের এই রিসোর্টগুলোয়। তিনি ডেরার ভেতর আইফেল টাওয়ার, ক্রুজ জাহাজ, তাজমহল, দ্য মুন, ওভাল প্যালেস, স্প্রিং ভিলা, হর্স হাউস, ডিজনিল্যান্ড, রাজমহল, খাওয়াবাগের নকশার আদলে বিলাসবহুল রিসোর্ট নির্মাণ করেছিলেন। সেখানে ভোগবিলাসের যাবতীয় ব্যবস্থাসহ সুইমিং পুলও আছে। প্রতিটি রিসোর্টে দুই থেকে তিনটি কক্ষ রয়েছে। এখানে শিশুদের জন্য স্কুলের ব্যবস্থাও আছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেরার ভেতরের এই ডিজনিল্যান্ডে রাম রহিমের পালক মেয়ে হানিপ্রীত ইনসানের প্রবেশাধিকার ছিল। এ ছাড়া অল্প কয়েকজন বিশ্বস্ত সহযোগী ছাড়া সেখানে আর কারও প্রবেশাধিকার থাকত না। সাজানো বিলাসবহুল এই ডিজনিল্যান্ডেই তিনি সাধ্বীদের ধর্ষণ করতেন।

টাইমস নাউয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাম রহিমের ডেরার ভেতরের এই ‘ডিজনিল্যান্ড’ সাত তারকা হোটেলের সমমান। ব্যক্তিগত এই ডিজনিল্যান্ডে মোট ৬৯টি কক্ষ রয়েছে। ভক্ত-অনুসারীরা নিজেদের সাধ্য অনুযায়ী বাবার ডেরায় আর্থিক অনুদান দেয়। আর সেই অর্থেই নিজের ভোগবিলাসের জন্য ডিজনিল্যান্ড বানিয়েছিলেন রাম রহিম।

প্রতিবেদনে বলা হয়, রোজ রাতে রাম রহিম প্রধান সাধ্বীকে ফোন করে একজন অল্প বয়সী মেয়েকে ব্যক্তিগত ডিজনিল্যান্ডে তাঁর কক্ষে পাঠানোর জন্য বলতেন। আর সেখানেই তিনি ওই সাধ্বীকে ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতন করতেন, যা ডেরায় ‘বাবার মাফি’ নামে পরিচিত।

ধর্ষণ মামলার প্রধান তদন্তকারী কর্মকর্তা এম নারায়ণ একটি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, কথিত ধর্মগুরু রাম রহিমের ডেরায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ কনডম ও জন্মনিরোধক ওষুধ জব্দ করেছে সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই)। যৌন নির্যাতনের কারণে ১৯৯৯ থেকে ২০০২ সালের মধ্যে ২০০ নারী রাম রহিমের ডেরা ছেড়ে গিয়েছিলেন। তদন্ত সংস্থা সিবিআই তাঁদের মধ্যে মাত্র ১০ জনকে খুঁজে পেয়েছে। তাঁদের মধ্যেও মাত্র দুজন নারীকে দিয়ে আদালতে অভিযোগ দায়ের করাতে পেরেছে। ধর্ষণ মামলায় রায় হওয়ার পর ডেরা থেকে ১৮ জন নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে। তারাও ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না, তা জানতে ডাক্তারি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানো হবে।

গত ২৫ আগস্ট দুই নারী ভক্তকে ধর্ষণের অভিযোগে দায়ের হওয়া দুটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করা হয় রাম রহিমকে। এরপর নেওয়া হয় রোহতক শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরের সানোরিয়া কারাগারে। এতে রাম রহিমের সমর্থকেরা পঞ্চকুলা এলাকায় তাণ্ডব শুরু করে। পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৩১ জন নিহত ও ২৫০ জন আহত হয়। পরে গত সোমবার রাম রহিমকে দুটি মামলায় ১০ বছর করে ২০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন সিবিআই আদালত।

LEAVE A REPLY