ভোলায় দুর্যোগ মোকাবেলায় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী

0
735

আদিল হোসেন তপু, ভোলা নিউজ ২৪ ডটনেট॥ ৮ মে আন্তজার্তিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট দিবস। ১৮৬৩ সালে সুইজারল্যান্ডের নাগরিক ‘জীন হেনরি ডুনাল্ট’ আত্মমানবতার সেবায় এর প্রতিষ্ঠা করেন। তার অনুপ্রেরনায় অনুপ্রেরিত হয়ে দ্বীপজেলা ভোলায় রেড ক্রিসেন্টের ৫শতাধিককর্মী স্বেচ্ছায় জীবনের ঝূঁকি নিয়ে আত্মমানবতার সেবায় কাজ করছে’। ঝড়-জলোচ্ছাসসহ নানা প্রকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষকে প্রচারনার মাধ্যমে নিরাপদে আনতে সহায়তা করছেন তারা। শুধু তাই নয়, দুর্যোগের পরেও তারা নিরলসভাবে কাজ করে ত্রান সহায়তা কার্যক্রম করছেন। এতে দ্বীপের মানুষ সচেতন হয়ে দুর্যোগ মোকাবেলায় সাহসি ভুমিকা পালন করছে শিখেছে। উপকূলের মানুষকে এভাবে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হলেও ভোলার রেড ক্রিসেন্ট আধুনিক উপকরন ও সরঞ্জামসহ নানা প্রযুক্তির সংকটের মধ্যে রয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে আজ (৮ মে) ভোলা রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের উদ্যোগে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে আলোচনা সভা ও বর্ণাঢ্য র‌্যালী ও পুরস্কার বিতরনীর আয়োজন করা হয়েছে। উক্ত অনুষ্ঠানে সকল সদস্যদের উপস্থিত থাকার জন্য জেলা রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানিয়েছেন।
উপকূল ঘুরে এবং রেড ক্রিসেন্টকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে ভোলার উপকূলের উপর দিয়ে বয়ে গেছে সিডর, আইলা, রেশমি ও মহাসেনসহ অসংখ্য ঘূর্নিঝড়। এসব ঝড়ের সময়ে অন্যান্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মত রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির কর্মীরা মানুষকে রক্ষায় নেমে পড়েছিলেন প্রচারনায়। মাইক হাতে দিয়ে গেছেন ঝড়ের পূর্বাভাস।
মানুষকে নিরাপদে আশ্রয় কেন্দ্রে আনতে পরামর্শের পাশিপাশি দুর্যোগ পরবর্তি সময়ে উদ্ধার কাজেও তাদের রয়েছে সমান অংশগ্রহন।
শুধু তাই নয়, মানবতা, পক্ষপাতহীনতা, নিরপেক্ষতা, স্বাধীনতা, স্বেচ্ছামূলকসেবা, একতা ও সার্বজনীনতার ৭টি লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সেচ্ছাসেবীরা। এতে দুর্যোগ মোকাবেলায় বেশ সচেতন রিমোট এলাকার মানুষ।
এমনই এক জনপদ জেলার দৌলতখান উপজেলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মদনপুর। সেখানে ৫ হাজার মানুষের বসবাস। দুর্যোগের আগে ও পরে কি করনীয় বা ঝড়ের পূর্বাভাস তারা ঠিক সময়ে পান। তাই ঝড়ের সময় তারা থাকছেন পুরোপুরি নিরাপদ। চরপদ্মা, চর টবগী, চর মদনপুর, মধুপুর ও চর মুন্সি গ্রামের মানুষ দুর্যোগ এলেই নিরাপদ আশ্রয় নেন।
মদনপুরের বাসিন্দা আ: রশিদ বলেন, আগে ঝড়-বন্যা হলে পুরো ঝড়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হতে, গরু-মহিষ ও জানমালের ক্ষতি হতো কিন্তু এখন রেড ক্রিসেন্ট প্রচারনা করায় তেম ক্ষয়-ক্ষতি হয়না।
গৃহবধু রোকসানা বলেন, বান-বন্যা ও ঘুর্নিঝড় হলো আমাদের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করি। আগে আমরা এ সচেতন ছিলাম না এখণ সব জানি।
স্থানীয় স্কুল শিক্ষক সিহাব উদ্দিন বলেন, ঝড়ের আগে লোকজন বন্যা বাতাসের বিষয়টি মাইকিং করে জানিয়ে দেয় সেভাবে আমরা ঝড়ের পূর্বাভাস জানতে পারি।
রেডক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে কাজ করছেন সাঈদ আলী। তিনি বলেন, ১-৩ পর্যন্ত একটি পতাকা, ৪-৬ পর্যন্ত ২টি পতাকা ৭-৯ পর্যন্ত হলে মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে খবর ছড়িয়ে দেই। মাঠ পর্যায়ে কাজ লুৎফর রহমান পাটোয়ারী বলেন, এখানকার মানুষ অনেক নিরাপদ।
রেড ক্রিসেন্ট ভোলা ইউনিট এর যুব সদস্য আনোয়ার হোসেন, আল মাহমুদ, সাকিব, রাকিব, সাদ্দাম বলেন, ঝড় বন্যা কিংবা প্রকৃতিক দুযোর্গের সময় তৃণমূলের নিরাপত্তায় প্রচারনা চালাতে গিয়ে আমাদের অনেক ঝূঁকি নিতে হয়। আমরা সিডর, আইলা ও মহাসেনের সময় ব্যাপক কাজ করেছি, তখন দুর্যোগের আগে এবং পরে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষকে উদ্ধার কাজ করছি।
শুধু প্রচারনা নয়, মাঠ পর্যায়ে উঠান বৈঠক এবং শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসার প্রশিক্ষনের মাধ্যমে রেডক্রিসেন্টের ধারাবাহিক এ কার্যক্রমটি এলাকার মানুষের জন্য অনেকটা সুফল বয়ে এনেছে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। আর তাই দুর্যোগ মোকাবেলায় মানুষ সচেতন হচ্ছে বলে স্বীকার করেছেন দুর্গম মদনপুর ইউপি চেয়ারম্যান নাছির উদ্দিন নান্নু। তিনি বলেন, রেডক্রিসেন্ট অনেকটা আন্তরিকতার সাথে কাজ করছে, যারফলে মানুষ ঝড়ের পূর্বাভাস জানতে পারছে এবং সে অনুয়ায়ী নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান করে।
এ ব্যপারে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ভোলা জেলা ইউনিট সাধারন সম্পাদক মো: আজিজুল ইসলাম বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মরণকে বরণ করে কাজ করছে ভোলা রেড ক্রিসেন্ট এর সদস্যরা কাজ করে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌঁছার জন্য আমাদের আধুনিক নৌযান ও লাইফ জ্যাকেটসহ নানা উপকরনের অভাব রয়েছে। তাই আমাদের এসব আধুনিক উপকরন ও নৌযান, পিক্যাব প্রয়োজন।
তিনি বলেন, ভোলা একটি দুর্যোগ প্রবন এলাকা, তাই এখানে যে কোন ঝড় আঘাত হানে। সেই সব দুর্যোগের আগে ও পরে আমাদের কর্মীরা অত্যান্ত দক্ষতার সাথে কাজ করছে।
এদিকে ‘রেড ক্রস রেড ক্রিসেন্ট, সর্বত্র সবার জন্য’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দিবসটি পালন করবে। দুর্যোগ প্রবন এই জেলায় আরো দক্ষ এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দুযোর্গ মোকাবেলায় একটি শক্তিশালী সংগঠনে প্রতিষ্ঠিত হবে রেডক্রিসেন্ট, এমনটি প্রত্যাশা ভোলাবাসীর।

ছবি সংযুক্ত
##
আদিল হোসেন তপু
ভোলা প্রতিনিধি
০৭/০৫/১৮

LEAVE A REPLY