রাশিয়া প্রথম করোনার টিকা তৈরি করেছে আমার মেয়েও নিয়েছে: পুতিন

0
110

ভোলা নিউজ২৪ডটকম ।। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বে ছয়টি সম্ভাব্য টিকা মানবপরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি টিকা রাশিয়ার।

Lifebuoy Soap

এর আগে রয়টার্স জানায়, রাশিয়ায় অনুমোদন পেতে যাওয়া টিকাটি যৌথভাবে তৈরি করেছে দেশটির গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। টিকাটি এতে নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হলে তা স্বাস্থ্যকর্মী ও দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের প্রথমে প্রয়োগ করা হবে। নিবন্ধন দেওয়ার পর টিকাটি আরও ১ হাজার ৬০০ মানুষের ওপর প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে।

স্পুতনিক নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিল মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ওষুধের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার সময় সংক্ষিপ্ত করার আদেশ দেন। এর মধ্যে করোনার টিকার পরীক্ষার বিষয়টিও ছিল। শুরুতে গত ১৭ জুন টিকাটি ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রাথমিক পরীক্ষা হয়। তাঁদের মধ্যে অর্ধেককে তরল টিকা ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করা হয় আর বাকি অর্ধেককে দ্রবণীয় পাউডার হিসেবে টিকাটি দেওয়া হয়। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরে প্রতিরোধী সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এ টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার শিল্পমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে আমরা টিকাটির ব্যাপক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য সময় গুনছি।’

গত মঙ্গলবার অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে রাশিয়াকে টিকা তৈরিতে সব ধরনের নীতিমালা মানার আহ্বান জানানো হয়। মস্কো দ্রুত টিকা তৈরির পরিকল্পনা জানানোর পর এর নিরাপত্তা কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমেয়ার জেনেভায় জাতিসংঘের এক আয়োজনে বলেছেন, প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা ও চর্চা আছে। টিকা খুঁজে পাওয়া বা টিকা কীভাবে কাজ করে, তা জানা ও টিকা তৈরির সব কটি ধাপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা ছাড়াও রাশিয়ার ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অব ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির পক্ষ থেকেও টিকা তৈরির কথা জানানো হয়েছে।

টিকা তৈরি ও পরীক্ষা করতে যেখানে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়, সেখানে অনেকটা রাতারাতিই শতভাগ সফল টিকা তৈরি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোতে কিছু স্বাস্থ্যকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাকে টিকা নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাশিয়ার দাবি, এটা বিশ্বের প্রথম কোভিড-১৯ টিকা। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এটি নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ার পর তা গ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মস্কোভিত্তিক গামেলিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকাটি গ্রহণের জন্য একটি হাসপাতাল স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা করেছে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সরকারি কর্মকর্তারাও টিকা গ্রহণের চিঠি পাওয়ার কথা বলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী অক্টোবরে জনগণের বড় অংশের মধ্যে টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। দেশটির সরকার এমন তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ দেশটির তাস সংবাদ সংস্থাকে জানান, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি মাসে তাঁরা কয়েক লাখ টিকার ডোজ তৈরি করবেন বলে আশা করছেন।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম অনুমোদন দিচ্ছে তাঁর দেশ। আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সম্প্রচারিত সরকারি এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, মস্কোর গামেলিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি করা টিকা নিরাপদ বলে প্রমাণ হয়েছে। তিনি এই টিকা তাঁর এক মেয়ের শরীরেও দিয়েছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়, দুই মাসের কম সময়ে মানবপরীক্ষা করে রাশিয়ার পক্ষ থেকে নিরাপদ দাবি করা এই টিকা মস্কোর বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা প্রদর্শন করছে। সাধারণত টিকা তৈরি ও মানবশরীরের পরীক্ষায় কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়।

রাশিয়ায় টিকা সরকারিভাবে নিবন্ধিত হওয়ায় তা রাশিয়ার জনগণের ওপর ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করা যাবে। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার চূড়ান্ত ধাপে থাকা অবস্থায় এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষাও চালু থাকবে।

Lifebuoy Soap

বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা তৈরির যে প্রতিযোগিতা চলছে, এতে দ্রুত সবার আগে টিকা আনার বিষয়টি তাদের ইচ্ছাশক্তির প্রতিফলন বলেই ধরা হচ্ছে। তবে বিশ্বজুড়ে এই টিকা উদ্বেগও সৃষ্টি করেছে। এর কার্যকারিতা ও নিরাপত্তার বিষয়টি এখন রাশিয়ার সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে টিকার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলেছেন পুতিন নিজেই। তিনি বলেছেন, টিকা নিরাপদ বলেই তিনি তাঁর মেয়েকে টিকা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি এটা দারুণ কার্যকর। শক্তিশালী প্রতিরোধক্ষমতা দেখায়। যত পরীক্ষা আছে, এর সব কটিতেই এটি পাস করেছে।’

পুতিন বলেন, তিনি আশা করছেন, তাঁর দেশ শিগগিরই টিকা ব্যাপক আকারে উৎপাদন শুরু করবে।

বিশ্বজুড়ে নিয়ন্ত্রকেরা বলছেন, দ্রুতগতিতে কোভিড-১৯ টিকা তৈরির ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। তবে সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দ্রুত টিকা তৈরির বিষয়টি সরকারের ওপর জনগণের অনাস্থা তৈরি করছে।

গত মাসে রয়টার্সকে একটি সূত্র জানিয়েছে, টিকাটির অনুমোদন পেলে দেশটির কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থ্যকর্মীদের এই টিকা নেওয়ার আহ্বান জানানো হবে।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ঠেকাতে ১০০টিরও বেশি টিকা তৈরির কাজ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চারটি টিকা মানবপরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে।

LEAVE A REPLY