আগুন নেভাবে স্মার্ট হোম

0
358

ভোলা নিউজ২৪ডটনেট।।উঁচু ভবন বা বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েই অনেকে ভাবেন, পুরো নিরাপত্তা দেওয়া হলো। কিন্তু অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা এড়ানো বা আগুন নেভানোর আধুনিক ব্যবস্থার দিকে নজর না দিলে ভয়াবহ ক্ষতি ও জীবনহানির মতো ঘটনা ঘটে যায়। আধুনিক প্রযুক্তির কল্যাণে দূরে থেকেও বাড়ি বা অফিসের অবস্থা জানা যায় এখন। কিছু স্মার্ট যন্ত্র অগ্নিকাণ্ড থেকে শুরু করে নানা দুর্ঘটনায় নিরাপত্তা দিতে পারে সহজেই। স্মার্ট হোম ধারণা এখন বিশ্বব্যাপীই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। স্মার্ট হোম তখনই হয়ে উঠবে যখন দালানে স্মার্ট যন্ত্র ব্যবহার করা হবে। যেগুলো ধোঁয়া, আগুন শনাক্ত করতে পারবে, নির্দিষ্ট জায়গা বা মানুষের কাছে তথ্য পাঠাতে পারবে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগুন নেভাতেও পারবে।

যথাযথ নকশা ও স্মার্ট যন্ত্র জরুরি
সুউচ্চ ভবন তৈরির নকশা অনুমোদন নেওয়ার অন্যতম পূর্বশর্ত হলো, সেখানে ভবন নিরাপত্তার সব নীতিমালা মেনে চলা হয়েছে তা নিশ্চিত করা। এমনকি নির্মাণের পরেও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুমোদন সাপেক্ষে ভবনে গ্যাস, পানি ও বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলো, এই সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান থেকে অসৎ উপায়ে অনুমোদন নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে নির্ধারিত সুরক্ষা নীতিমালা না মেনেও নতুন ভবন তৈরি সম্ভব হচ্ছে। বলছিলেন শামস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রিন্সিপাল ডিরেক্টর মো. শামসুজ্জোহা। তাঁর প্রতিষ্ঠান এ দেশে ভবনে আগুন শনাক্তকরণ এবং সুরক্ষাব্যবস্থা সংবলিত ডিজাইন তৈরি ও নির্মাণের কাজ করে যাচ্ছে।
নীতিমালা মেনে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে কি না, তা আরও কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। সামান্য উদাসীনতা বা অবহেলার কারণে বহু মানুষের জীবনহানিসহ অনেক ক্ষতি হতে পারে। অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনায় সতর্কসংকেত পেতে বা স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নেভানোর জন্য এখন অনেক ধরনের স্মার্ট যন্ত্র বা প্রযুক্তিগত সমাধান পাওয়া যায়। এই যুগে এসব যন্ত্রের সহায়তা নেওয়া উচিত বলে জানালেন মো. শামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, ‘বাড়ি বা ভবন নির্মাণের সময় এসব প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা মাথায় রাখলে বাড়ি যেমন স্মার্ট হয়ে ওঠে, তেমনি নিরাপত্তাও বেড়ে যায়।’

নেস্ট প্রোটেক্টনেস্ট প্রোটেক্টশনাক্ত এবং আগুন থেকে সুরক্ষায় স্মার্ট যন্ত্র স্মার্ট স্মোক ডিটেকটর
ধোঁয়া শনাক্ত করার আধুনিক যন্ত্রগুলো বাড়ির কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাব্যবস্থা বা স্মার্ট হোম হাবের সঙ্গে যুক্ত করা যায়। ফলে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা চিহ্নিত করা গেলে সঙ্গে সঙ্গে তা মোবাইল ফোনের অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের সতর্ক হতে পরামর্শ দেয়। সাম্প্রতিক যন্ত্রগুলো কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস শনাক্ত করতে পারে। ফলে অন্যান্য ধোঁয়ার সঙ্গে পার্থক্য বুঝতে সহজ হয়। কখনো আবার স্মার্ট হোমের সঙ্গে যুক্ত এই যন্ত্র ক্যামেরার মাধ্যমে ভিডিও ধারণ করা শুরু করতে পারে।

স্মার্ট ফায়ার ডিটেকটর
ঘরের তাপমাত্রা যখন নির্দিষ্ট মাত্রা অতিক্রম করে বা তাপমাত্রা বাড়ার হার অস্বাভাবিক হয়, তবে এই স্মার্ট ফায়ার ডিটেকটর সতর্কসংকেত বাজাতে থাকে। ক্ষেত্র বিশেষে এই যন্ত্রগুলো তাপমাত্রার সঙ্গে সঙ্গে ধোঁয়া ও বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের উপস্থিতি চিহ্নিত করতে পারে।

এই স্মার্ট যন্ত্র কেবল যে আগুন শনাক্ত করছে এমনই নয়, বরং কিছু কিছু যন্ত্র আগুন নেভানোর ব্যবস্থাগুলো সক্রিয় করতে পারে। ভবনের বিদ্যুৎ ও গ্যাসের সংযোগ কেন্দ্রীয়ভাবে ব্যবস্থাপনার সুযোগ থাকলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এমন দুর্যোগের সময় মূল সংযোগ বন্ধ করে আপৎকালীন বিকল্প ব্যবস্থা চালু করতে পারে।

স্মার্ট ব্যাটারি
আগে থেকে সক্রিয় স্মোক ডিটেকটরগুলো যদি কেন্দ্রীয় স্মার্ট হাবের সঙ্গে যুক্ত না থাকে, তবে স্মার্ট ব্যাটারি ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাটারির সঙ্গে বাড়তি কিছু সরঞ্জাম যুক্ত থাকে, যা ওয়াই–ফাই বা মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়ে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন বার্তা বা নোটিফিকেশন পাঠাতে পারে।

ওয়ান লিংক সেফ অ্যান্ড সাউন্ডওয়ান লিংক সেফ অ্যান্ড সাউন্ডস্মার্ট স্টোভটপ আগুন নির্বাপণ প্রযুক্তি
বাড়িতে আগুন লাগার একটা উৎস হলো রান্নাঘরের চুলা। স্মার্ট স্টোভটপের সঙ্গে যুক্ত মোশন সেন্সর সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখে, চুলার সামনে কেউ আছে কি না। চুলার সামনে থেকে চলে যাওয়ার একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে এই যন্ত্র চুলা বন্ধ করতে শুরু করবে। একই সঙ্গে বিপদের সংকেত পাঠাবে নির্দিষ্ট যন্ত্রে।
স্মার্ট হাব
যে ধরনের স্মার্ট যন্ত্রই যুক্ত করা হোক না কেন, তা অন্য সব যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে। স্মার্ট হাবের সঙ্গে কেন্দ্রীয়ভাবে যুক্ত থাকলে সেখান থেকে মোবাইল অ্যাপ ও এসএমএসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা সম্ভব হবে।
আধুনিক যন্ত্রগুলো এখন গুগল হোম এবং আমাজন অ্যালেক্সার সঙ্গে কাজ করার উপযোগী করে তৈরি করা হয়। পাশাপাশি স্মার্ট হাব ব্যবস্থার অংশ হিসেবেও আগুন শনাক্ত করার যন্ত্র পাওয়া যায়। নেস্ট প্রোটেক্ট হলো এখন বাজারে থাকা সর্বোচ্চ মানের স্মোক ডিটেকটর। বিভিন্ন ধরনের সেন্সর সংযুক্ত এই যন্ত্র সব ধরনের আগুন ও ধোঁয়া চিহ্নিত করতে পারে।

স্মার্ট ব্যাটারিস্মার্ট ব্যাটারিফার্স্ট অ্যালার্ট হলো স্মার্ট স্মোক অ্যালার্মের মতো যন্ত্রও জনপ্রিয় ও কার্যকর। আর সাধারণ স্মোক ডিটেকটরগুলোর সঙ্গে স্মার্ট বৈশিষ্ট্য যুক্ত করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে লিও স্মাট অ্যালার্ট এবং রুস্ট স্মার্ট ব্যাটারি। এই যন্ত্রাংশগুলো ইন্টারনেটের মাধ্যমে মোবাইলের অ্যাপে আগুনসংক্রান্ত সতর্ক বার্তা পাঠাতে এবং স্মার্ট হাবের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
আগুন শনাক্তকরণ এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা ভবনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি অংশ। কারণ, এটি ত্রুটিপূর্ণ হলে মানুষের জীবনহানির আশঙ্কা থাকে। পরিবার বা প্রতিষ্ঠানপ্রধানের এই বিষয়ে উদাসীনতা দেখানোর অর্থ হলো, তাঁরা আপনার জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে একেবারেই ভাবছেন না। তবে সচেতন হতে হবে প্রত্যেককেই। কোনো ক্ষতি হয়ে যাওয়ার পরে অন্য কাউকে দোষ দেওয়া থেকে আগেই সমাধানের জন্য উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

কোথায় পাবেন?
অগ্নিকাণ্ড ঠেকাতে বা নিয়ন্ত্রণের জন্য যেসব স্মার্ট যন্ত্র রয়েছে, সেগুলোর ব্যবহার দেশেও দেখা যায়। আপনার ভবন নির্মাণে জড়িত আবাসন বা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, প্রকৌশল প্রতিষ্ঠান বা পরামর্শক প্রকৌশলী, অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রপাতি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে বললে তারা এসব স্মার্ট যন্ত্রে এনে দেওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে। এ ছাড়া এসব যন্ত্র অনলাইনে অামাজন ডটকমে পাওয়া যায়।

LEAVE A REPLY