সংরক্ষিত নারী এমপি হতে ভোলার  ৫ নারী নেত্রীর দৌড়-ঝাঁপ

0
601
আদিল হোসেন তপু, ভোলা নিউজ ২৪ডটনেট॥ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীতে এসেছে নতুন চমক। এবার আলোচনায় শুরু হয়েছে সংরক্ষিত মহিলা আসনের নারী এমপিদের নিয়ে। এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনাও চলছে মাঠ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে দৌড়-ঝাঁপ শুরু হয়ে গেছে দ্বীপ জেলা ভোলা নারী নেত্রীদের মধ্যেও। সংসদের ৫০টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ভোলা থেকে  প্রার্থী হতে বর্তমান মহিলা এমপি সহ ভোলা মহিলা আওয়ামী লীগ,যুব মহিলা লীগ নেতারা এর মধ্যেই তারা   আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে পর্যায়ে লবিং করে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে নিজেদের অবস্থানসহ দলীয় কর্মকান্ডে নিজেদের সমপৃক্ততার বিভিন্ন দিক তুলে ধরছেন তারা।
এছাড়াও সম্প্রতি শেষ হওয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজ নিজ আসনের আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাইছেন তৃর্নমূল পযার্য়ে। তুলে ধরেছেন জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের কথা। দায়িত্ব পেলে নারীর ক্ষমতায়নে সক্রিয় থাকার পাশাপাশি চলমান উন্নয়নের ও অংশীদার হতে চান। আর ভোলার সুশীল সমাজ মনে করছেন রাজনীতিতে ত্যাগী, সক্রিয়, ও পরিচ্ছন্ন নেত্রীদের সংরক্ষিত মহিলা এমপি আসনে জায়গা দেয়া উচিত। যারা পিছিয়ে পড়া ভোলার নারী জনগোষ্ঠির উন্নয়নে সক্রিয় ভাবে কাজ করে যাবে। আর সবারই একটা বিশ্বাস দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের যোগ্যতা মূল্যায়ন করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের ত্যাগী ও আস্থাভাজন সক্রিয়দের মধ্য থেকে সংরক্ষিত মহিলা সংসদ সদস্য পদে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যারা বেশি আলোচনায় রয়েছেন তারা হলেন-বর্তমান মহিলা এমপি ও ভোলা জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম, ভোলা জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ এর বর্তমান ভাইস (মহিলা) চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা অধ্যক্ষ শাফিয়া খাতুন,মনপুরা উপজেলার চেয়ারম্যান সেলিনা চৌধুরী,ভোলা জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক ও নারী নেত্রী খাদিজা আক্তার স্বপ্না ও লালমোহন উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি কামরুন নাহার সুমি সংরক্ষিত নারী এমপি হিসাবে মনোয়ন চাচ্ছেন।
এ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম:-
বর্তমান মহিলা এমপি ও ভোলা জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংরক্ষিত-৩১৫ (ভোলা-বরিশাল-৪৫)আসনে মহিলা এমপি হিসাবে বর্তমানে আছেন। বাবা বীরমুক্তিযোদ্ধা রিয়াজ উদ্দিন খান ১৯৬৬ সালে ভোলা জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক ছিলেন। এ্যাডভোকেট মমতাজ বেগম ২০১০ ভোলা সদর উপজেলা পরিষদ এর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের স্থায়ী কমিটির দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
অধ্যক্ষ শাফিয়া খাতুন:-
ভোলা জেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ এর বর্তমান প্যানেল চেয়ারম্যান বিশিষ্ট সমাজ সেবিকা ও ক্রীড়া অনুরাগী অধ্যক্ষ শাফিয়া খাতুন তিনি এবার সংরক্ষিত মহিলা এমপি আসনে মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে সংরক্ষিত আসনে দলের জন্য ছাড় দিলেও এবার তিনি মনোনয়ন চাইবেন। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারে জন্ম নেয়া ্য অধ্যক্ষ শাফিয়া খাতুন এর পরিবারের মুক্তিযোদ্ধার জন্য  এই পরিবারের রয়েছে অসামান্য অবদান। তার দুই মামা পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে নিশংস ভাবে হত্যা হয়। আওয়ামীলীগ পরিবারের  মেয়ে শাফিয়া খাতুন এর  স্বামী এ্যাডভোকেট সৈয়দ আশরাফ হোসেন লাভু দীর্ঘদিন ভোলা জেলা আওয়ামীলীর সহ-সভাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছে।তার বড় ছেলে সৈয়দ আশিক বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রিয় কমিটির সহ-সভাপতিও নির্বাচন কালীন উপ-কমিটি সদস্য হিসাবে সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করে। তার দুই মেয়ে আশা নাজনিন অষ্ট্রোলিয়ায় জাতিসংঘ পরিবেশ বিষয়ক পরার্মশ হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে। আরেক মেয়ে ইশা নাজনিন জাপানে ডাক্তারী করছেন। অধ্যক্ষ শাফিয়া খাতুন শুধু রাজনীতির সাথে জড়িত নয় এম পাশ করে  শিক্ষায় ও সামাজিক কাজেও বেশ অনুপ্রেরনীয় অন্যন্য নারীদের কাছে। এরব স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ, লেডিস ক্লাবের সহ-সভাপতি,মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতিও সমাজ সেবায় অসামান্য অবদান রাখার জন্য জয়িতা সম্মাননা পেয়েছেন। এছাড়াও  তিনি শিক্ষক সমিতিও স্কাউট এর সাধারন সম্পাদক, জাতীয় মহিলা সংস্থার সদস্য  হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। অধ্যক্ষ শাফিয়া খাতুন তার রাজনীতির অনুপ্রেরনা বর্তমান সরকারের ৪ বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাজনীতিক আইডল বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির কনিষ্ঠ সহচর সাবেক বানিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তার মেধাও যোগ্যতা দিয়ে এমপি হতে পারলে উপকূলীয় জেলা ভোলার নারী উন্নয়নে ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তিনি তিনি তৃর্নমূলে তুলে ধরবেন।
সেলিনা চৌধুরী:-
ভোলার মনপুরা উপজেলার বর্তমান চেয়ারম্যান সেলিনা চৌধুরী। তার স্বামী জাফর উল্ল্যাহ চৌধুরী এক সময় ভোলা-৪ আসনের এমপি ছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে সেলিনা চৌধুরী অবহেলিত মনপুরা উপজেলার উন্নয়নে ভোলা-৪ আসনে এমপি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এর আস্থাবান প্রতিনিধি হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।নারী উপজেলার চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন তৃর্নমূল মানুষের কাছে। মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি সব সময় সামনে থেকে কাজ করে গেছেন। বিচ্ছিন্ন মনপুরাকে তিনি একটি পর্যটন আকর্ষনীয় স্পট হিসাবে কাজ করে গেছেন। বিশেষ করে বাল্য বিয়ে,নারী নির্যাতন, যৌতুক প্রথা সহ নানা সামাজিক কাজে অগ্রনী ভূমিকা রেখে চলছেন। মনপুরার স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় রেখে চলছে অসামান্য অবদান। তাই দলের পক্ষ থেকে মহিলা এমপি হিসাবে মনোয়নয় পেলে কাজ করে যাবেন তৃর্নমূল মানুষের জন্য।
খাদিজা আক্তার স্বপ্না:-
মহিলা আসনের সংসদ সদস্য’র মনোনয়ন চেয়ে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন ভোলা জেলা যুব মহিলা লীগের আহবায়ক খাদিজা আক্তার স্বপ্না।সর্বশেষ ২০১৮ সালে নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে কুটুক্তিকারী ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেনের বিরুদ্ধে ভোলার আদালতে মানহানি মামলা করে নারী সমাজের প্রনিধিত্বকারী নেত্রী হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। সংরক্ষিত মহিলা আসনে আমাকে মনোনয়ন দিলে ভোলার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও জীবনমান উন্নয়নে কাজ করব বলে জানান। নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাসহ রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আমি সবার উন্নয়নে কাজ করব।ছোট বেলা থেকেই মনে প্রানে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অনুসরণ করে তাদের কর্মজীবনকে হৃদয়ের মনি কোঠায় লালন করে বড় হয়েছি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের হাত ধরেই আমি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করে আসছি।তিনি একজন ত্যাগী আওয়ামী পরিবারের সন্তান। তার বাবা মো. মোতাহার হোসেন মিয়া সদর উপজেলার ইলিশা ইউ.সি. মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন ও ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দীর্ঘ দিনের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। খাদিজা আক্তার স্বপ্নার স্বামী মো. রফিকুর রহমান ভোলা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। সব মিলিয়ে একটি স্বচ্ছ আওয়ামী লীগ পরিবারে বড় হয়েছেন খাদিজা আক্তার স্বপ্না।ভোলার বাংলা বাজার ফাতেমা খানম ডিগ্রী কলেজে শিক্ষকতা করছেন।   চায়।বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ যুব মহিলা লীগ ভোলা জেলার আহবায়ক,জেলা মহিলা ক্রিড়া সংস্থার যুগ্ম সম্পাদক,জেলা ক্রিড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য, মহুয়া নারী কল্যান সমিতির সভানেত্রী,জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ-সভাপতি,ভোলা আবৃত্তি সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক।
কামরুন নাহার সুমি:-
ভোলার সংরক্ষিত নারী আসনে মনোনয়ন চান লালমোহন উপজেলা যুব মহিলা লীগের সভাপতি কামরুন নাহার সুমি। তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে এমপি হতে পারলে নারী শিক্ষা ও নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কাজ করব। পাশাপাশি ভোলা জেলার সকল এমপিদের সঙ্গে থেকে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ও জীবনমান উন্নয়নে রাজনৈতিক ও সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। সুমি বলেন,পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতির আদর্শে  বেড়ে উঠেছি।এ কারণে বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক নির্যাতনের শিকার হয়েছে আমার পরিবার। কলেজ জীবনথেকে সক্রিয়, কলেজে ছাত্রলীগের মহিলা সম্পাদিকা ছিলাম। বিগত দিনে রাজপথের সকল আন্দোলন সংগ্রামে ছিলাম।
গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোলা-৩ আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নূরন্নবী  চৌধুরী শাওনের নৌকা মার্কার পক্ষে বিজয় নিশ্চিত করতে উপজেলা যুব মহিলালীগের সভাপতি হিসেবে কমিটির সকলনেত্রী ও কর্মীদের নিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে বিপুল  ভোটে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করেছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলার প্রত্যন্ত অ লের নারীদের সেবা করার জন্য আমাকে  ভোলার সংরক্ষিত নারী আসন থেকে মনোনয়ন দিবেন। ভোলা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক এনামুল হক আরজু বলেন, সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যদের মনোনয়ন দেবেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্য থেকে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব দিক বিবেচনা করে যাকে যোগ্য মনে করবেন তিনিই  মনোনয়ন পাবেন।
৫ টি পৌরসভার ও ৬৯ ইউনিয়ন  নিয়ে গঠিত এই জেলার  মোট লোকসংখ্যা-২০,৩৭,২০১ জন। যার অর্ধেক মহিলা।

 

LEAVE A REPLY